বন্ধ ট্রেন চালুর দাবিতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএমকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে বাদানুবাদ

বন্ধ ট্রেন চালুর দাবিতে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএমের সঙ্গে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খানের তর্ক-বিতর্ক। রোববার সকালে রাজশাহী রেলভবনেছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী-পার্বতীপুর রেলপথে বন্ধ হওয়া ‘উত্তরা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি আবার চালুর দাবিতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মামুনুল ইসলামকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। আজ রোববার সকালে রাজশাহী রেলভবনে তাঁর দপ্তরে অনুমতি ছাড়া ঢোকার প্রসঙ্গ তুলে তিনি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে নাগরিক সমাজ।

উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি অনেক দিন ধরেই বন্ধ। ট্রেনটি চালুর দাবিতে আজ সকালে একটি স্মারকলিপি নিয়ে জিএমের কার্যালয়ে যান সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তাঁরা প্রথমেই জিএমের কার্যালয়ের সামনে ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন। পরে তাঁর কার্যালয়ে ঢোকেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, সংগ্রাম পরিষদের নেতারা জিএমের কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে দপ্তরের একজন পিয়ন বলেন, জিএম মামুনুল ইসলাম শৌচাগারে আছেন। তখন তাঁরা ভেতরে ঢুকে জিএমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সেখানে আগে থেকে রেলের দুই কর্মকর্তা বসে ছিলেন। শৌচাগার থেকে বেরিয়েই দপ্তরে লোকজন দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মামুনুল। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার চেম্বারে আসবেন, তো অনুমতি নেবেন না? একটু অনুমতি নেওয়ার তো ব্যাপার থাকে।’

তখন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘আমরা আপনার পিয়নকে জানিয়েই ঢুকেছি। আর এটা আপনার চেম্বার মানে? আপনার চেম্বার কেন? এটা সরকারি অফিস। আপনি সরকারের একজন সার্ভেন্ট।’ এ সময় জিএম বলেন, ‘কিন্তু আপনি একটা চেম্বারে আসবেন, বলবেন না?’ তখন জামাত খান বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে, আপনি অনেকের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। এটা আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই অফিস চলে জনগণের টাকায়। জনগণকে কেন অনুমতি নিয়ে আসতে হবে? আজ আপনি যে ভবনে বসে আছেন, সেটা ১৯৯৭ সালে আমরা রক্ষা করেছি। এই রেলভবন রাজশাহী থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। আমরা রক্ত দিয়ে এটা রক্ষা করেছি।’

এ সময় একজন সাংবাদিক জিএমের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার খুশি হওয়া উচিত ছিল যে জনগণের দাবিদাওয়া নিয়ে রাজশাহীর নাগরিক সমাজ এসেছে। কিন্তু আপনি আপনার ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আপনি বলেছেন, অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। আপনি দেখেননি যে পিয়নের কাছে অনুমতি নেওয়া হয়েছে? আপনি কোনো সাংবাদিকের ফোনও ধরেন না। আপনি পাবলিক সার্ভেন্ট। ২৪ ঘণ্টা আপনি সার্ভিস দেবেন।’

পরে রাজশাহী ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম মোস্তফা (মামুন) সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর জিএম মামুনুল ইসলামের কাছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লেখা স্মারকলিপিটি হস্তান্তর করা হয়। স্মারকলিপিতে রাজশাহী-পার্বতীপুর রেলপথে বন্ধ হওয়া উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আবার চালুর দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপি দেওয়ার সময় সুজনের রাজশাহী জেলার সম্পাদক মাহমুদুল আলম, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা ও সাংবাদিক আকবারুল হাসান (মিল্লাত), নারীনেত্রী সেলিনা বেগম, আঞ্জুমান আরা (লিপি) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জিএমের দপ্তর থেকে বেরিয়ে জামাত খান বলেন, উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহী ও পার্বতীপুরের মধ্যে সেতুবন্ধন হয়ে ছিল। শ্রমজীবী মানুষ এই ট্রেনে রাজশাহী ও পার্বতীপুরে যাতায়াত করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। বিগত সরকারের সময় ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ট্রেনটি চালু করা না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। তিনি বলেন, ‘আজ জিএম আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করলেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা অনুমতি নিয়ে ঢুকলেও তিনি আমাদের অপমান করেছেন।’

জিএম মামুনুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রেন চালুর ব্যাপারে তাঁরা যে স্মারকলিপি দিলেন, সেই অনুযায়ী আমি পদক্ষেপ নেব। আশা করি, ট্রেনটি চালু করতে পারব।’