সাথি ফসল চাষ করে তাক লাগালেন রেহেনা

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সফল কিষানি রেহেনা ফেরদৌসি ভুট্টাখেতে সাথি ফসল হিসেবে আলু চাষ করেছেন
ছবি: প্রথম আলো

নানা কৌশলের ব্যবহার কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। এ রকম একটি কৌশল সাথি ফসল চাষ। এই পদ্ধতিতে একই সঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এবার ভুট্টার সঙ্গে সাথি ফসল আলু চাষ করে সফল হয়েছেন এক নারী উদ্যোক্তা ও কৃষক। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ওই নারী উদ্যোক্তার নাম রেহেনা ফেরদৌসি।

রেহেনা ফেরদৌসির বাড়ি পাটগ্রাম উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়নের ঘোনাবাড়ি গ্রামে। স্বামী পাটগ্রাম টি এন (তারকনাথ) স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল ওহাব প্রধান। স্বামী চাকরিতে ব্যস্ত থাকায় শুরু থেকে কৃষিজমি দেখাশোনা করতেন তিনি। এরপর তিনি পুরোপুরি কৃষিতে ঝুঁকে পড়েন ও সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান।

পাটগ্রাম কৃষি বিভাগের ভাষ্যমতে, নতুন প্রযুক্তির সংযোজন করে এক জমিতে ফলছে হরেক রকম ফল ও ফসল। এক জমিতে একই সঙ্গে দুই থেকে তিনটি ফসল এখন আর স্বপ্ন নয়। এক জমিতে কম খরচে ও কম সময়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় কৃষিতে দেখা দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। একই জমিতে একই সময় দুই ফসল উৎপাদনে তাই আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। যেকোনো একটি ফসলের সঙ্গে চাষ করা হচ্ছে সময়োপযোগী আরেকটি ফসল।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘোনাবাড়ি গ্রামের রেহেনা ফেরদৌসি প্রায় দেড় একর জমিতে দুর্যোগ–সহনশীল ভুট্টাখেতে কার্ডিনাল আলুর চাষ করেছেন। খেত থেকে আলু তুলছেন পাঁচ নারী শ্রমিক। এই জমিতে ৫০০ মণের বেশি আলু হয়েছে।

নারী উদ্যোক্তা রেহেনা ফেরদৌসি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ দেখাশোনায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের উপসহকারীদের সঙ্গে পরামর্শ করে একই জমিতে সাথি ফসল চাষ করার উদ্যোগ নিই। গত বছরের ১৫ নভেম্বর কার্ডিনাল আলুর বীজ রোপণ করি। এর প্রায় এক মাস পর ডিসেম্বরে একই জমিতে দুর্যোগ–সহনশীল জাতের ভুট্টা লাগাই। আলুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। ১১০ দিনের মধ্যে আলু তোলা হচ্ছে। এবার তিনি ৫০০ মণের বেশি আলু পেয়েছেন। এক বছরে একই জমিতে আলু, ভুট্টা ও রোপা আমন ধান তিন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। খরচ অনেক কম, মুনাফা বেশি। এতে তাঁর আয় হবে তিন লাখ টাকা বলে তিনি আশা করছেন।

এ বিষয়ে রেহেনা ফেরদৌসির স্বামী আবদুল ওহাব প্রধান জানান, ‘দেড় একর জমিতে বেশ ভালো আলু উঠেছে। আলু চাষাবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। পাইকারি বাজারদরে আলু বিক্রি করা যাবে তিন লাখ টাকা। কিছুদিন পর ভুট্টা তুলে ধান রোপণ করা যাবে।’

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহনুর আলম বলেন, ‘রেহেনা ফেরদৌসি কৃষি ও চাষাবাদের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। তাঁর এ সাথি ফসল চাষাবাদের ব্যাপারে অনেক কৃষক আগ্রহী।’

পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল গাফ্ফার বলেন, ‘আলু ও ভুট্টার সাথি ফসল চাষ এটা বেশ ভালো উদ্যোগ। নারী হিসেবে তিনি একজন ভালো ও সফল উদ্যোক্তা।
সাথি ফসল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কৃষকদের  সাথি ফসল চাষে উৎসাহিত করতে আমরা সব সময় মাঠে কাজ করছি। ইতিমধ্যেই আমরা বেশ কিছু প্রদর্শনীও দিয়েছি। যেমন মাল্টাবাগানে আমের চাষ, পটোলের মাচার নিচে আদা চাষ। তা ছাড়া সাথি ফসল হিসেবে বেগুন, লালশাক, মুলা, বাঁধাকপিও চাষ করছেন অনেক কৃষক। তাই এই সাথি ফসল পদ্ধতিতে সবাই চাষ করলে তা দেশের কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটাবে এবং আধুনিক কৃষিকে সফলতার নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে। সরকারি নির্দেশনায় আমরা কৃষকদেরকে সব সময় পরামর্শ ও সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।’