তিন চাকার অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য, এক বছরে দুর্ঘটনায় ২৫ মৃত্যু 

সর্বশেষ দুর্ঘটনা ঘটে ২৪ জানুয়ারি। ওই দিন সাদিব হোসেন নামের এক শিশু জন্মদিনে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়।

বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাকড়ি বোঝাই করে চলছে তিন চাকার অবৈধ যান। পাবনার বেড়া-সাঁথিয়ার মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহন দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা। সম্প্রতি বেড়া বাসস্ট্যান্ডেছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মহাসড়গুলোতে তিন চাকার অবৈধ যানবাহনের চলাচল ব্যাপক বেড়েছে। এসব যানবাহনের কারণে গত এক বছরে অন্তত ৪০টি দুর্ঘটনায় দুই উপজেলায় ২৫ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক।

মহাসড়কে অটোভ্যান, নছিমন, করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ এগুলোর চলাচল বন্ধে নিষ্ক্রিয় থাকায় গত কয়েক মাসে পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এসব অবৈধ যান।

পুলিশ আগে আমাগরে মহাসড়কে উঠপেরই দিত না। গাড়ি আটক করত। এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করি। কেউ কিছু কয় না।
মো. বাবু, নছিমনচালক, আমিনপুর, বেড়া, পাবনা

পুলিশ ও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন ধীর গতির বলে মহাসড়কে এগুলোর চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব যানবাহনের ব্রেক যেমন দুর্বল, তেমনি কাঠামোও মহাসড়কে চলার উপযোগী নয়। তাই প্রায়ই এগুলো দুর্ঘটনায় পড়ে। এ ছাড়া এসব যানবাহন চালকেরা ট্রাফিক আইন তোয়াক্কা করেন না। এ বিষয়ে ধারণাও নেই। এসব চালক মহাসড়কে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়েন, অন্য যানবাহনেরও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ান। তাই সারা দেশের মহাসড়কগুলোতে তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের দায়িত্বে রয়েছে মাধপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এই হাইওয়ে থানার পুলিশ দায়িত্ব পালনে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে তিন চাকার অবৈধ যানবাহনগুলোর বেপরোয়া চলাচল বেড়েই চলেছে। গত এক বছরের মধ্যে আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে এই হাইওয়েতে দুর্ঘটনা ও হতাহত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার কারণ তিন চাকার যানবাহন।

মাধপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের টহল অব্যাহত থাকলেও এখনো আমরা শক্ত অবস্থানে যাচ্ছি না। তবে খুব শিগগির আমরা তিন চাকার অবৈধ যানবাহন চলাচলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

পুলিশ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে তিন চাকার যানবাহনের কারণে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার মহাসড়কে অন্তত পাঁচজন নিহত হন; কিন্তু আগস্ট থেকে হঠাৎ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বৃদ্ধির সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়ে যায়। গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে শুরু করে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন চাকার যানবাহনের কারণে মহাসড়কে সংঘটিত প্রায় ৩০টি দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। সর্বশেষ দুর্ঘটনাটি ঘটে ২৪ জানুয়ারি সাঁথিয়া উপজেলার আফরা নামক স্থানে। ওই দিন সাদিব হোসেন (৮) নামের এক শিশু তাঁর জন্মদিনে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়।

ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের বেড়া ও কাশীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুটি স্থানেই বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাত্রী তোলার অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার অবৈধ যানবাহন। বেড়ার আমিনপুর থেকে মহাসড়ক ধরে বেড়া পৌর এলাকায় নছিমনভর্তি ইট নিয়ে আসা নছিমনচালক মো. বাবু বলেন, ‘পুলিশ আগে আমাগরে মহাসড়কে উঠপেরই দিত না। গাড়ি আটক করত। এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করি। কেউ কিছু কয় না।’