সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সাড়ে নয়টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মিলনায়তনে জড়ো হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীরা। নাচ-গান-মূকাভিনয়ে আনন্দ–উল্লাসে মেতে ওঠে তারা।
সকালেই মিলনায়তনের নিচতলা ও দোতলার সব আসন পূর্ণ হয়ে যায়। মিলনায়তনে ঠাঁই না পেয়ে অনেকে বারান্দায় বসে অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্ব উপভোগ করে। স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় অনেকে খোশগল্প জুড়ে দেয়।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয়েছে জিপিএ-৫ উৎসব। আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
এবারের সংবর্ধনায় অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা থেকে ১ হাজার ২৫০ কৃতী শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বুথ থেকে ক্রেস্ট ও স্ন্যাকস সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা। সকাল পৌনে ১০টায় ভেন্যু স্কুলের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রথম আলো বন্ধুসভা নারায়ণগঞ্জের সভাপতি আফরিন সুলতানার সভাপতিত্বে ও সাবেক সভাপতি রাসেল আদিত্যের সঞ্চালনায় প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের সমন্বয়ক মুনির হাসান, নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর শিক্ষক রায়হান এ আর খান ও মাসুদ জাবেদ জিমি বক্তব্য দেন।
তিন ‘ম’কে (মাদক, মুখস্থ, মিথ্যা) ‘না’ ও মাদকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শপথ পড়ান ভেন্যু স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুদা আক্তার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি মজিবুল হক।
কৃতী শিক্ষার্থী আফতাবুন নেছা বলে, ‘এই সংবর্ধনা আমাদের সামনে ভালো ফলাফল করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের শিক্ষার্থী প্রীতম সাহা বলে, ‘কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি আয়োজন করায় শিখো-প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে ১০ গুণী শিক্ষককে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমার জীবনকে ভালোবাসতে হবে। সৎ ও সুস্থ মানুষ হতে হবে। তোমরা সৎ ও আদর্শবান দেশপ্রেমিক মানুষ হও, সেই প্রত্যাশা রইল।’
রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘তোমরা নিজেদের গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয় অর্জন করেছ। এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা শুধু আমাদের নিজেদের গড়ব না, আমাদের সমাজটাকে গড়ব, দেশটাকে গড়ব। আমরা যেন আমাদের মা-বাবা ও শিক্ষকদের অবদানের কথা ভুলে না যাই।’
অনুষ্ঠানে মুনির হাসান বলেন, ‘তোমরা প্রযুক্তির বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছ। পৃথিবী এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই তোমাদের নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। তোমরা যদি মানুষে-মানুষে জোড়া দাও, তাহলে একটি দেশ জোড়া লাগে। মানুষে-মানুষে জোড়া দিলে সেই দেশ একটি উন্নত দেশের দিকে যেতে পারে। তাই তোমাদের জীবনের লক্ষ্য পূরণে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই তোমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন অয়ন চাকলাদার, প্রিন্স মামুন, ভেন্যু স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশ করে। প্রথম আলো বন্ধুসভার নারায়ণগঞ্জের বন্ধুরা মূকাভিনয়ে অংশ নেন। সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার হিসেবে ছিল ক্রেস্ট, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, শিখোর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস, সানকুইকের ফ্রুট জুস, প্রথম আলোর ই-পেপারের ফ্রি সাবস্ক্রিপশন (তিন মাস), প্রথমা ডটকমে বই অর্ডারে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশন ও প্র-প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার ছয় মাসের মুদ্রণ ভার্সনের সাবস্ক্রিপশনে বিশেষ ছাড়। অনুষ্ঠানের মূল মিলনায়তনের বাইরে অভিভাবকেরা বসে ছিলেন। তাঁরাও বিনা মূল্যে বুধবারের প্রথম আলো পত্রিকা পড়েন।