৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। নতুন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে কী কী পরিবর্তন হয়েছে?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: ৫ আগস্টের আগে ক্যাম্পাসে এক ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কোনো শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ছিল না; কিন্তু শিক্ষার্থী ছাড়া ক্যাম্পাস মরুভূমির মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে এনেছি। শ্রেণিকার্যক্রম শুরুর ব্যবস্থা করেছি। দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ বন্ধ ছিল। সে অচলায়তন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে নতুন পরিস্থিতিতে ‘মব জাস্টিস’ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। ক্যাম্পাসে এটি যাতে না হয়, সে জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা কমিটিকে জানানোর বিষয়ে প্রচার করা হয়। ফলে মব জাস্টিস ঠেকানো গেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচনের বিষয়ে আপনি কী ভাবছেন?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমাদের শিক্ষাঙ্গন বিশৃঙ্খল। পাশের দেশ ভারত, নেপাল এমনকি পাকিস্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও শৃঙ্খল। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক যে রাজনীতি, সেটিই বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ। প্রশ্ন আসতে পারে, নেতা কীভাবে তৈরি হবে, যোগ্য নেতৃত্ব কীভাবে আসবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো যোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা। আমরা যদি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতা তৈরির কারখানা বানাব, তাহলে শেষ। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিকল্প হতে পারে ছাত্র সংসদ। ফলে আমরা চাকসু নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি।
বিগত সময়ে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন উপাচার্যের সময়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগ কি আপনারা খতিয়ে দেখছেন?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ শুরু করেছে।
বিভিন্ন বিভাগে বিদ্যমান সেশনজট কমাতে কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমি ধারাবাহিকভাবে প্রতি বিভাগে গিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষার খোঁজ নিচ্ছি। আচমকা গিয়ে দেখছি ক্লাস ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাস শেষ করা ও পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছি। ক্লাস ও পরীক্ষা ঠিক সময়ে নিতে পারলে সেশনজট থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোনো র্যাঙ্কিংয়ে জায়গা পাচ্ছে না। শিক্ষা ও গবেষণায় পিছিয়ে আছে। এর থেকে উত্তরণে আপনার পরিকল্পনা কী?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: গবেষণা ও শিক্ষার মান বাড়াতে আমরা কাজ শুরু করেছি। কেউ গবেষণায় এত মনোনিবেশ করেন যে ক্লাস নেওয়ার সময় পান না। শ্রেণিকার্যক্রম ও গবেষণার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার বিষয়ে বলেছি। আমাদের গবেষণার বরাদ্দ নিয়ে সংকট নেই। ভালো গবেষণার জন্য টাকার অভাব হবে না। আর র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির জন্য গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমে উন্নতি করতে হবে।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করছেন। আমি রাতের বেলায় ক্যাম্পাসে টহল দিই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে শুধু নয়, ট্রেনেও নিরাপত্তা দিতে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
বিগত সময়ে হলগুলো দখল ছিল। মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি কী? এখন কি মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: দায়িত্ব নেওয়ার পর হলে প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বরাদ্দের নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে শুধু মেধা নয়, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। যে শিক্ষার্থী দরিদ্র, সে অগ্রাধিকার পাবে। এ ছাড়া আগে হলের আসন দখলদারির সংস্কৃতিকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। দখলের অস্তিত্ব এখন নেই।
আগের নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এখন কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হবে?
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার: নিয়োগ হবে তিনটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। আবেদন যাচাই শেষে যোগ্য প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। ফলাফলের ভিত্তিতে প্রার্থীরা ডেমো প্রেজেন্টেশনে অংশ নেবেন। এরপর হবে সাক্ষাৎকার। ফলে সমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হবে। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ হলে দলবাজি বন্ধ হয়ে যাবে।