অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক তামিমের আদর্শ ক্রিকেটার সাকিব
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় আজিজুল হাকিম তামিম বাবার কাছে ক্রিকেট খেলার একটা ব্যাট চেয়েছিলেন, ব্যাটটির দাম ছিল আট হাজার টাকা। তখন বাবা মোহাম্মদ হোসাইনের কাছে অত টাকা ছিল না। ছেলের কষ্ট দেখে অভাবের মধ্যেও বাকি করে ব্যাটটি কিনে দিয়েছিলেন তিনি। সেই ছেলেই বছর সাতেকের মাথায় পুরো বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন আনন্দের এক উপলক্ষ।
এই তামিম হলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। তাঁর হাত ধরেই গতকাল রোববার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তুললেন বাংলাদেশের তরুণেরা।
আজ সোমবার সকালে যশোর শহরের বারান্দিপাড়া অম্বিকাবসু লেনে তামিমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা–বাবা, ভাই-বোন, ভাবি—সবাই বাড়িতে আছেন। তামিমের সাফল্যে তাঁরা গর্বিত। ছেলের বিভিন্ন সময়ে অর্জনের ট্রফি দেখে বারবার আপ্লুত হচ্ছিলেন তামিমের মা–বাবা।
তামিমের বাবা মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চার ছেলে-মেয়ে। তার মধ্যে তামিম সবার ছোট। চারজনকেই লেখাপড়া শিখিয়েছি। তাদের মধ্যে তামিম ক্রিকেটার হয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। বাবা–মা হিসেবে এটা আমাদের জন্য বড় গর্বের। চার ছেলে–মেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি তামিমের ক্রিকেট সরঞ্জামের টাকার জোগান দেওয়া অনেক কঠিন ছিল। ক্রিকেট খেলার সামগ্রীর অনেক দাম। সব সময় ছেলেকে সেসব কিনে দিতে পারিনি।’
কথা বলতে বলতে কয়েক বছর আগের একটি ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘একটা ব্যাটের জন্য তামিম বায়না করেছিল। তখন তাকে নিয়ে খেলাঘরে গেলাম। একটি ব্যাট ছেলে পছন্দ করল। ওই ব্যাটের দাম ছিল আট হাজার টাকা। তখন ওই টাকা আমার কাছে ছিল না। ছেলের চোখে পানি চলে আসে। তা দেখে বাকিতেই ব্যাটটি কিনে দিয়েছিলাম। পর আস্তে আস্তে ওই টাকা পরিশোধ করেছিলাম।’
তামিম যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ঢাকার বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েও যেতে পারেননি তিনি। এর ফলে নিজ উদ্যোগেই খেলাধুলা চালিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। তামিমের ভাই আবু হুরাইরা বলেন, তামিমের আদর্শ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। যদিও তাঁদের বাবার পছন্দের ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। এ জন্য ছেলের নামের রাখেন তামিম।
ক্রিকেটের জন্য তামিমের ত্যাগের কথা বলেন তাঁর ভাই আবু হুরাইরা। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন তামিম। তখন তাঁর ডাক আসে প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেট লিগের হয়ে ভারতের আসাম ও মুম্বাই শহরে খেলার জন্য। পরীক্ষা ফেলে খেলতে চলে যান তামিম। সেবার আর পরীক্ষায় বসা হয়নি তাঁর। এবার তিনি পরীক্ষায় বসবেন।
তামিমের বাবা মোহাম্মদ হোসাইন যশোর আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও নিবন্ধিত কাজী। তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি, আমার ছেলে তামিম একদিন জাতীয় ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দেবে।’
তামিম সব বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলুক, তা কখনো চাননি তাঁর মা সুলতানা পারভীন। তিনি চেয়েছিলেন, ছেলে চিকিৎসক হয়ে গরিব–দুঃখী মানুষের সেবা করুক। তবে এখন তিনি ছেলের সাফল্যে গর্বিত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তামিম ক্রিকেট খেলে যখন যে টাকা পেয়েছে, তা আমার কাছে এনে দিয়েছে। আমি সেই টাকা এতিমখানায় ও গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে দিয়ে দিয়েছি। ছেলের সাফল্যে আমি গর্বিত।’