‘সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইল না’

নিহত কামাল হোসেনের স্ত্রী ও সন্তানেরা। গত মঙ্গলবার ঝালকাঠি সদর উপজেলার আগরবাড়ি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

‘স্বামীর মৃত্যুতে সন্তান নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। পরিবারে আর কেউ উপার্জনের মানুষ নেই। ছোট মেয়েটি এখনো “বাবা বাবা” বলে কাঁদছে। এখন আমাদের সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইল না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সাদিয়া বেগম (রানু)।

ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় সাদিয়া বেগমের স্বামী কামাল হোসেন ওরফে সবুজ (৩৮) নিহত হয়েছেন। তিনি ঢাকায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের গাড়িচালক ছিলেন। গত শনিবার সকালে ঢাকার বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন কামাল।

কামাল হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বালকদিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মুনসুর হাওলাদার। সোমবার সকালে সদর উপজেলার আগরবাড়ি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে কামাল হোসেনকে দাফন করা হয়।

কামাল হোসেন ও সাদিয়া বেগম দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। সাদিয়া সন্তানদের নিয়ে ঝালকাঠি শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার আগরবাড়ি এলাকায় বাবার বাড়িতে গিয়ে সাদিয়া বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর পাশে বসে ছিল ছোট দুটি ছেলে-মেয়ে। ছেলেটির বয়স সাত ও মেয়েটির বয়স পাঁচ বছর। ছেলেটির গলায় বাবার অফিসের পরিচয়পত্র ঝোলানো।

কামাল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

সাদিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী বলে গেছেন, তিনি মারা গেলে তাঁকে যেন তাঁর জন্মস্থান বিনয়কাঠিতে কবর না দিয়ে ঝালকাঠিতে আমাদের কাছাকাছি কোথাও কবর দিই। তাই তাঁকে আমার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।’

সাদিয়া আরও বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঝালকাঠি শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। এখন আমাদের থাকার জায়গা নেই। সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই, যাতে আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’

আরও পড়ুন

বড় ছেলে সামিউল ইসলাম (১৩) ঝালকাঠি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সে বলে, ‘বাবার আয়ে আমাদের তিন ভাইবোনের লেখাপড়া খরচসহ সংসার চলত। এখন আমাদের বাবা নেই। আমাদের খরচ চালাবে কে?’

ঢাকায় লাশ আনতে গিয়েছিলেন সাদিয়া বেগমের ভাই রিপন হাওলাদার। তিনি জানান, শনিবার সকালে বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নাশতা খেতে বের হয়েছিলেন কামাল হোসেন। তখন কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা চলছিল। হঠাৎ কামালের মাথায় গুলি লাগে এবং ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।

রিপন হাওলাদার বলেন, ‘আমার বোনটি বিধবা হয়ে গেল। ওদের আহাজারি দেখে আমরা কান্না ধরে রাখতে পারছি না।’

আরও পড়ুন