লালমনিরহাট মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ঢেকে রাখা ম্যুরালের কিছু অংশ ভাঙা হয়েছে
কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে লালমনিরহাট শিশুপার্ক–সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরালের আংশিক ভেঙে ফেলা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে শ্রমিক নিয়োগ করে ম্যুরালের আংশিক ভাঙা হয়।
এর আগে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় লালমনিরহাট জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. হামিদুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে ‘স্বৈরাচারের সব ম্যুরাল’ অপসারণ করতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে লালমনিরহাটের ফ্যাসিজমের সব চিহ্ন মুছে ফেলা হয়, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চের বিতর্কিত ম্যুরালটি রয়ে যায়। যে ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। তাই স্বৈরাচারের সব চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্র–জনতার দাবি ও গণ–আকাঙ্ক্ষা।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরালের আংশিক ভাঙার কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক বলেন, জেলা পরিষদের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাঁরা ম্যুরালটির কিছু অংশ অপসারণের কাজ করছেন।
এ বিষয়ে রোববার লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক ও লালমনিরহাট জেলা পরিষদের প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বিপরীত দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিআর সারোয়ার কোনো রকম মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে ম্যুরালটি ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে লালমনিরহাট প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১৪ সালে লালমনিরহাটের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক মঞ্চের ম্যুরাল নির্মিত হয়। ম্যুরালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতাযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার গঠন, স্বাধীন ভূখণ্ডে নব রবির উদয়, ’৭১–এর গণহত্যা, বিজয়ে উচ্ছ্বসিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, জাতীয় পতাকা হাতে উল্লসিত জনতা ইত্যাদি। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানের দিন পরপর দুবার ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অতিক্রম’-এর আহ্বায়ক কবি ও সাংবাদিক হেলাল হোসেন কবির বলেন, ‘ম্যুরালটি ভাঙার নির্দেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে। নাহলে এটায় হাত দেওয়ার কারও সাহস পাওয়ার কথা নয়। এর আগেও ম্যুরালটি ১৬ ডিসেম্বর এবং ২৬ মার্চ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন।’
টিআইবির সহায়তায় গঠিত ‘সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায়। সনাকের লালমনিরহাট এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা আগেও ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার প্রতিবাদ করেছি। এখন ম্যুরাল ভাঙার খবর শুনলাম, বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাব।’