‘জিপিএ-৫ উৎসবে এসে বুকটা ভরে গেল’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে উচ্ছ্বসিত কৃতী শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাইবান্ধা জেলা শহরের সুলতানা কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম মিলনায়তনেছবি: মঈনুল ইসলাম

‘অজপাড়াগাঁয়ে বড় হয়েছি। যে স্কুলে পড়েছি, সেটিও নিভৃত এলাকায়। মা–বাবার কাছে গল্প শুনেছি, আগে স্কুলে প্রতি সপ্তাহে বিচিত্রানুষ্ঠান হতো। আমি এমন অনুষ্ঠান হতে দেখিনি। বড় পরিসরে বন্ধুদের সঙ্গে কখনো আনন্দ করা হয়নি। আজ জিপিএ-৫ উৎসবে এসে বুকটা ভরে গেল। যাকেই দেখছি, সবার পরনে নতুন পোশাক, হাসিমাখা মুখ। অনেকটা ঈদের দিনের আনন্দের মতোই লাগছে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাইবান্ধায় শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সাদুল্যাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের চক গোবিন্দপুর গ্রামের কৃতী শিক্ষার্থী কাইয়ুম আকন্দ। আজ জেলা শহরের শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম চত্বরে সুলতানা কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হচ্ছে।

সকাল নয়টা থেকে কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে আসার কথা। কিন্তু সাড়ে আটটা থেকেই শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে। অনেকের সঙ্গে আসেন অভিভাবকেরাও। স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে বন্ধুসভার সদস্যরা দাঁড়িয়ে থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীরা অভ্যর্থনা জানান। পরে তারা ক্রেস্ট ও নাশতার ব্যাগ নিয় মিলনায়তনে প্রবেশ করে। বন্ধুসভার সদস্যরা শিখো-প্রথম আলো সংবর্ধনার নিবন্ধনপত্র দেখে তাদের হাতে উপহারের ব্যাগ তুলে দেন।

অনুষ্ঠানস্থলে এসে শিক্ষার্থীরা আনন্দ মেতে ওঠে। তারা শিখো-প্রথম আলো সংবর্ধনার ফ্রেমে ছবি তোলে। একে অপরের মুঠোফোন নম্বর ও ফেসবুক আইডি জেনে নেয়। নানা গল্প-আড্ডায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।

‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয়েছে জিপিএ-৫ উৎসব। আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরের কলেজ রোড এলাকার কৃতী শিক্ষার্থী সানিয়া জান্নাত বলে, ‘পত্রিকায় দেখে জেনেছি। এরপর অনলাইনে নিবন্ধন করি। উৎসবে আসব বলে নতুন পোশাক কিনেছি। বড় অনুষ্ঠানে যাব, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, নতুন বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে। গান শুনব, পুরস্কার পাব, মজাই আলাদা। এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তাই গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছি।’

কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাইবান্ধা জেলা শহরের সুলতানা কামাল ইনডোর স্টেডিয়াম মিলনায়তনের পাশে
ছবি: প্রথম আলো

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কালাসোনারচর গ্রামের কৃতী শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান বলে, জেলা শহর থেকে তার বাড়ি ২০ কিলোমিটার দূরে। নৌকায় দুই ঘণ্টা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আধা ঘণ্টা লেগেছে এখানে আসতে। এখানে এসে নাশতা খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে, বেশ ভালো লাগছে।

অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে আসা পলাশবাড়ী উপজেলার ঢোলভাঙ্গা গ্রামের বিথী খাতুন বলে, ‘একা কখনো জেলা শহরে আসা হয়নি। জীবনের প্রথম একটা সংবর্ধনা পাব। এই সুযোগ মিস করতে চাইনি। তাই মাইক্রোবাস ভাড়া করে অনুষ্ঠানে এসেছি। সকালে আসতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এখানে এসে পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলাম। সব কষ্ট ভুলে গেছি।’

শিক্ষার্থীরা ক্রেস্ট, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, শিখোর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস, সানকুইকের ফ্রুট জুস, প্রথম আলো ই-পেপার (তিন মাস) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, প্রথমা ডটকমে অনলাইনে বই অর্ডারে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশন ও প্রথমা প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার ছয় মাসের প্রিন্ট ভার্সনের সাবস্ক্রিপশনে বিশেষ ছাড় পায়।