বেনাপোল বন্দরে মাফিয়া চক্রের কারণে যাত্রী হয়রানি হয়: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

উদ্বোধন শেষে দেড় হাজার ট্রাক ধারণক্ষমতার কার্গো টার্মিনাল ঘুরে দেখেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরেছবি: প্রথম আলো

যশোরের বেনাপোল বন্দরে থাকা মাফিয়া চক্রের কারণে যাত্রী হয়রানি হয় বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বেনাপোল বন্দরে কার্গো টার্মিনাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে কার্গো টার্মিনাল উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন। এরপর তিনি দেড় হাজার ট্রাক ধারণক্ষমতার কার্গো টার্মিনাল ঘুরে দেখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

এ সময় সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে অবব্যবস্থাপনা আছে, ছিল। এগুলো আমরা আস্তে আস্তে দূর করার চেষ্টা করছি।’ যাত্রী হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে মাফিয়া চক্র আছে। তাদের কারণে যাত্রী হয়রানি হয়। যাত্রীদের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়; টাকাপয়সা নিয়ে নেওয়া হয়—এই সবই আমার জানা। আমি আশা করব, আস্তে আস্তে যেন এসব হয়রানি দূর হয়।’

বেনাপোল বন্দরে অন্তত দুটি স্ক্যানার মেশিন থাকা দরকার। সেখানে একটি আছে। সেটিও নষ্ট। মেশিনটি নষ্ট হওয়ায় প্রচণ্ড জনজট সৃষ্টি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার কামরুজ্জামানকে ডেকে বলেন, ‘আপনি কাল সকালে ঢাকাতে গিয়ে বসে থেকে স্ক্যানার মেশিনটি ঠিক করে বেনাপোলে ফিরবেন।’

আরও পড়ুন

এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, বেনাপোলের যানজট বড় একটি সমস্যা। এ জন্য কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ ত্বরিত গতিতে শেষ করা হয়েছে। এখন বন্দরের দীর্ঘদিনের যানজট ও পণ্যজট কমে যাবে। দেড় হাজার ট্রাক একই সঙ্গে এই টার্মিনালে রাখা যাবে। এতে দেশের সবচেয়ে বড় বেনাপোল বন্দরে ব্যবসা–বাণিজ্যে গতি আসবে। বন্দরের সবকিছু আধুনিক করার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

পরে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সভাকক্ষে বেনাপোল বন্দরের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। সেখানে বন্দর ব্যবহারকারীরা বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

বেনাপোল বন্দরের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান বলেন, ‘মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বন্দরের নিজস্ব ক্রেন ও ফরক্লিপ রয়েছে। অথচ বেনাপোল দেশের সবচেয়ে বড় বন্দর হলেও এগুলো ভাড়ায় চালানো হয়। বেনাপোল বন্দরের কেন নিজস্ব ক্রেন ও ফরক্লিপ থাকবে না? বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে এগুলো ভাড়ায় সরবরাহ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যাদের এই বন্দরে ক্রেন ও ফরক্লিপসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করার সক্ষমতা নেই।’

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্দরের নতুন পরিকল্পনায় নিজস্ব ক্রেন ও ফরক্লিপের ব্যবস্থা থাকবে।’

ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডি এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, দেড় হাজার ট্রাক ধারণক্ষমতার কার্গো টার্মিনাল উদ্বোধন হলো। কিন্তু দেড় হাজার ট্রাকের পণ্য খালাস করে রাখার মতো জায়গা তো বন্দরে নেই। ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে পণ্য রাখার ইয়ার্ড নির্মাণের একটা প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। ওই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে পণ্য রাখার জায়গা–সংকট নিরসন হবে।
এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সবকিছু একটি পরিকল্পনার ভেতরে এনে বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ভারতের চেয়ে বেনাপোল বন্দরে বেশি ফ্যাসিলিটি (সুযোগ-সুবিধা) নিশ্চিত করা।’