ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাস ধরে শামসুন্নাহারের স্বামী ভ্যানচালক অলিয়ার রহমান (৬১) শয্যাশায়ী। এক ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে তাঁদের কষ্টের সংসার। শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই তাঁদের। তাই কনকনে শীতে তাঁদের কষ্ট আরও বেড়েছে।
শামসুন্নাহারের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া এলাকায়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি মির্জা গোলাম হাফিজ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও বন্ধুসভার সদস্যদের সহযোগিতায় শামসুন্নেহারের মতো ২০০ অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে শামসুন্নেহার বলেন, ‘কম্বলডা পায় খুপে উপকার হইল, বাপু। মোর অসুস্থ লোকটার (স্বামী) গাওত ঢাকা দিবা পারিম। বেলাডা ডুবিলে খুপে ঠান্ডা করছে। অসুখের লোকটা কনেক হইলেও শান্তি পাবে।’
এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বুড়াবুড়ি, মান্দুলপাড়া, মণ্ডলপাড়া, ডাহুক আশ্রয়ণ প্রকল্প, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আশ্রয়ণ প্রকল্প, দেবনগর ইউনিয়নের কালিয়ামনি এলাকার (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঢোল বাদক) বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করে তাঁদের হাতে একটি করে টোকেন (স্লিপ) তুলে দেন। দুপুরে টোকেন পাওয়া এসব মানুষ বুড়াবুড়ি মির্জা গোলাম হাফিজ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হন। এরপর তাঁদের সবার হাতে একটি করে কম্বল তুলে দেওয়া হয়।
কম্বল পেয়ে মান্দুলপাড়া এলাকার ইবিজান (৭০) বলেন, ‘খুপে ঠান্ডা, বাপু। এলা বয়স হইচে, শিলশিল ঠান্ডা বাতাসখান সহিবা পারু না। ঠান্ডাতে বেশি বেড়ানেড়া (হাঁটাচলা) করিবা পারু না। কম্বলডা দিলেন ভালয় হইল। আইতোত (রাতে) ঢাকা নিবা পারিম।’
এদিকে আজ সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৌষের শুরু থেকেই উত্তরের এই জনপদে বইছে হিমালয় থেকে আসা হিমেল হাওয়া। প্রায়ই দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে এই জনপদে। তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে আজ সকাল সকাল ওঠা মিষ্টি রোদের মধ্যে বুড়াবুড়ি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন নানা বয়সী ২০০ নারী-পুরুষ। বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল নিয়ে সেখানে হাজির হন পঞ্চগড়ের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
কম্বল বিতরণের সময় তেঁতুলিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহববুল হাসান, বুড়াবুড়ি মির্জা গোলাম হাফিজ উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন, প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান ও পঞ্চগড় প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কম্বল পেয়ে ৭৫ বছরের বৃদ্ধ কাশিম উদ্দিন বলেন, ‘এই বছর মোক কেহ কম্বল দেয়নি। তুমুরায় পরথম কম্বল দিলেন। বড় উপকার করলেন। মুই তোমহার তানে দুয়া করিম, বাপু।’
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।