‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলার প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ
রাজধানীতে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলার প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখা আজ শুক্রবার দুপুরে নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ। বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ইমাম হোসেন, সরকারি বরিশাল কলেজ শাখার সংগঠক শিবানী সিকদার, সদস্য তৈয়বুর রহমান, অর্থ সম্পাদক ফারজানা আক্তার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এই ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে মনে করিয়ে দেয়। এই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ সেই বিক্ষোভে নির্বিচার লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ব্যবহার করে। পুলিশের এই আগ্রাসী হামলা উগ্রবাদীদের পুনর্বাসন করার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
সমাবেশে বাসদ নেতা মনীষা চক্রবর্তী বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল শিক্ষার্থীদের। যাদের চেতনা ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। কিন্তু ছাত্রসমাজ অবাক হয়ে দেখল যে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী শব্দটি বাদ দেওয়া হলো এবং সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা তার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় একটি উগ্রবাদী সংগঠন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির ব্যানারে হামলা চালায়।
মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘শুধু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন মানেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নয়। সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর এই সন্ত্রাসী হামলার বিচার না হলে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও স্বপ্ন ব্যর্থ হবে। এ জন্য আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে এই হামলাকারীদের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করতে হবে।’
এই হামলার বিচার না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন মনীষা চক্রবর্তী। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ
রাজধানীতে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদল। বিক্ষোভ মিছিলটি বের করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় সমাবেশ করে।
সমাবেশে ছাত্রদলের নেতারা রাজধানীর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে আন্দোলনরত সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর এই হামলাকে বর্বরোচিত ও ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তাঁরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের শাস্তির দাবি জানান।
ছাত্রদল নেতারা বলেন, সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন বিক্ষোভ করছিল, তখন একটি কুচক্রী মহল তাদের ওপর হামলা চালায়। ফ্যাসিবাদের পতনের পর এ ধরনের হামলা ও অপ্রীতিকর আচরণ অগ্রহণযোগ্য। দ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। আজকের এই দিনে এসেও যদি নারীসহ আন্দোলনকারী সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা হামলার শিকার হন, তাহলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করেন? ছাত্রদল নেতারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, যাদের ইন্ধনে এ হামলা হয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
এ সময় বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী আজমাইন সাকিব মাহমুদ ইমরান, মাহমুদ ইমরান হোসেন প্রমুখ।
পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দসংবলিত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে গত বুধবার রাজধানীর এনসিটিবি ভবনের সামনে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা মিছিল বের করলে তাতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা অভিযোগ করে, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামের একটি সংগঠন তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।