রংপুরে ভিজিএফের চাল না পেয়ে ইউপি সদস্যকে মারধর করলেন ব্যবসায়ী
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভিজিএফ কার্ডের চাল না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার বড়বিল ইউপি চত্বরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গত জুনে ঈদুল আজহার সময় ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। তখন কিছু কার্ডের চাল বিতরণ স্থগিত করা হয়েছিল। গতকাল সেই সব স্থগিত কার্ডের বিপরীতে চাল বিতরণ করা হয়। ওই চাল বিতরণের সময় ইউপি সদস্য আজগার আলীকে মারধর করেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বলেন, আজগার আলী গত ঈদুল আজহার আগে তাঁর কাছে ২৭টি ভিজিএফ কার্ড পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। কিন্তু কিছু কার্ডের চাল বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছিল। গতকাল স্থগিত সেই কার্ডের বিপরীতে চাল দেওয়া হয়। তবে তিনি চাল পাননি। টাকা ফেরত চাইলেও ইউপি সদস্য টাকা দেননি। এ জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ওই ইউপি সদস্যকে পিটিয়েছেন।
তবে ইউপি সদস্য আজগার আলী বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী বিধিবহির্ভূতভাবে এক বস্তা ভিজিএফের চাল জোর করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বাধা দেওয়ায় তিনি আমাকে প্রকাশ্যে কিলঘুষি মেরেছেন। এ ঘটনায় আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’ তবে ওই ব্যবসায়ীর কাছে ভিজিএফের কার্ড বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আজগার আলী।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ‘ইউপি সদস্যকে মারধর করার ঘটনা শুনেছি। ব্যবসায়ীর কাছে ভিজিএফ কার্ড বিক্রি করার প্রমাণ পেলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে গতকালও ভিজিএফের কার্ডধারী অনেকে চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মাসুদ হোসেন (৫০) বলেন, ‘আমি আবাসনে থাকি, আমাকে স্লিপ দেওয়া হলেও চাল পাইনি।’
মমিনা বেগম (৭৫) নামের এক নারী বলেন, ‘ঈদের সময় মোক স্লিপ দিছে, দুই দিন আসি ঘুরি গেচুং, আজকা আসিয়াও ঘুরি গেনুং, চাল পানুং না।’
এ বিষয়ে জানতে গতকাল বিকেলে ও আজ মঙ্গলবার সকালে একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওই ইউপির সচিব ইলিয়াস হোসেন জানান, চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত টাকায় ১ হাজার ২১৯টি কার্ডের চাল কিনে দিয়েছেন। প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। যাঁরা চাল পাননি, তাঁদের কার্ড সঠিক ছিল না। চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
ভিজিএফের ওই কার্ড বিতরণে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হবে।
ভিজিএফের কার্ড বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে
এদিকে বড়বিল ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভিজিএফের ওই কার্ড বিতরণে অনিয়ম–দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে গত ১৩ জুন প্রথম আলোর অনলাইন সংস্কারণে ‘গঙ্গাচড়ায় ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম, প্রতিবাদ করায় দুজনকে মারধর’এবং ১৫ জুন ‘গঙ্গাচড়ায় পুলিশি পাহারায় চাল বিতরণ শেষে চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে দুস্থদের বিক্ষোভ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
ওই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ বিষয়ে ইউএনও নাহিদ তামান্না বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ভিজিএফের বরাদ্দ পাওয়া কার্ডের চেয়েও অতিরিক্ত অন্তত হাজার দুয়েক কার্ড বিতরণ করেছিলেন। পরে এসব কার্ড যাচাই–বাছাই করে ১ হাজার ২১৯টি কার্ড সঠিক পাওয়া যায়। যেহেতু মানুষের হাতে ওই অতিরিক্ত কার্ড ছিল, তাই ইউপি চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগতভাবে চাল কিনে বিতরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল ইউনিয়ন পরিষদে সেই চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়।
ইউএনও নাহিদ তামান্না আরও বলেন, ভিজিএফের ওই কার্ড বিতরণে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হবে।