বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা: মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে, পরিবারের ক্ষোভ

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে গত রোববার জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে (কানু) গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুই দিন আগে মামলা হলেও মূল হোতারা এখনো অধরা। যে দুজন (বহিষ্কৃত জামায়াত সমর্থক) জুতার মালা পরানোর পর ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার হাত ধরে টানাহেঁচড়া করেছেন, তাঁরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ওই মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আবদুল হাইকে লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার রাতে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার তাঁদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরই মধ্যে আবদুল হাইয়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চারজনের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। বাকি একজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর (শ্যোন অ্যারেস্ট) আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

চৌদ্দগ্রাম থানা-পুলিশ জানায়, ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, জুতার মালা পরানোয় ১০০ কোটি টাকার মানহানি এবং মারধরের অভিযোগে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার করা মামলাটি গত বুধবার রাতে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করে পুলিশ। মামলায় ১০ জনকে অভিযুক্ত করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ যেই ৫ জনকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজনকে এজাহারভুক্ত আসামি ও দুজনকে সাক্ষী করা হয়েছে মামলায়।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা গ্রামের ইসমাইল হোসেন মজুমদারকে (৪৩) ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তিনি পুলিশের হাতে আটক হওয়া পাঁচজনের একজন। বাকিদের নাম মামলা এজাহারে না থাকায় আমরা তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করিনি।’

কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান বলেন, পুলিশের হাতে আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজনের জামিন হয়েছে গতকাল বিকেলে। তবে সঠিক সময়ে নথিপত্র কারাগারে না পৌঁছানোর কারণে তাঁরা কারাগার থেকে গতকাল বের হতে পারেননি। আজ শুক্রবার তাঁরা কারাগার থেকে বের হবেন। বাকি একজনকে বীর মুক্তিযোদ্ধার মামলার শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। আগামী রোববার বা সোমবার সেটির শুনানি হবে বলে তিনি জানান।

এ ঘটনার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আতঙ্কে আছেন এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানান ছেলে ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া। প্রধান দুই আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার গলায় জুতার মালা দেওয়া মানে সব মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেওয়া। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অপমানের বিচার চাই। মূল হোতারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি, এ জন্য কষ্ট হচ্ছে।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এ টি এম আক্তার উজ জামান বলেন, আসামিরা সবাই এলাকা থেকে পলাতক। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত।

গত রোববার দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের (৭৮) গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আবদুল হাই ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এ ছাড়া একই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছনাকারী ব্যক্তিরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। আবদুল হাইকে এলাকাছাড়া করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।

তবে শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও সর্বশেষ সোমবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের বিবৃতিতে দলটির দুই সমর্থককে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন