কুড়িগ্রামে হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি, ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দী
কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ৩৪০ একর জমির ফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে ৯৭ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কার্যালয়টির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী অববাহিকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, সাহেবের আলগা ইউনিয়ন ও চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে।
তিস্তা নদীতীরবর্তী রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করলেও গতকাল রাত থেকে তা প্রবল আকার ধারণ করে। উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার নিম্নাঞ্চলের চরাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ, চর গতিয়াশাম, চর নাকেন্দা এলাকার প্রায় ১ হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব চরাঞ্চলের প্রায় ৪০ একর জমির ফসল ডুবে গেছে। বন্যার্ত ১ হাজার ৫০০ পরিবারের জন্য মাত্র ৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন বলে জানান ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
বিদ্যানন্দ ইউপির চেয়ারম্যান মো. তাইজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তার পানি দুই দিন ধরে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। এতে নদীতীরবর্তী নয়টি ওয়ার্ডের কিছু অংশ এবং চর বিদ্যানন্দ, আনন্দ বাজার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব চরাঞ্চলের প্রায় ২০০ একর ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল রাতে তিস্তার পানি বাড়ায় বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ‘এবার পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে মোটামুটি বড় বন্যা দেখা দেবে। গতকাল উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিন মেট্রিক টন চাল পেয়েছি। এত লোক পানিবন্দী, এই সামান্য চাল কাকে রেখে কাকে দিই?’ চাল বিতরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলে তিনি জানান।
উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীতীরবর্তী চর রামনিয়াশা, জুয়ান সতরা, খারিজা, নাটশালা, চর গোড়াইপিয়ার এলাকায় প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তার তীরবর্তী চর গোরাইপিয়ার, হোকডাঙা, কিশোরপুর, বামনপাড়া, কুমারপাড়ায় ভাঙনে ১ মাসে ১৮০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। প্রায় ১০০ একর রোপা আমন তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নদীভাঙনের শিকার ১৮০টি পরিবার ও পানিবন্দী মানুষের জন্য ত্রাণ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাইনি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাজারহাট উপজেলার দুটি ইউনিয়ন এবং উলিপুরের একটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৬২ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, শিশুখাদ্য বাবদ ২ লাখ ও গোখাদ্য ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা নগদ মজুত আছে বলে তিনি জানান।