মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, হাতবোমার আঘাতে তরুণ নিহত

সংঘর্ষের ঘটনায় আহতরা মাদারীপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল রোববার রাতেছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হাতবোমার আঘাতে আহত এক তরুণ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের মাদ্রা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই তরুণের নাম শাওন মাতুব্বর (১৯)। তিনি সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের পূর্ব মাদ্রা এলাকার জাহাঙ্গীর মাতুব্বরের ছেলে। আজ সোমবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওন মারা যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মদি এলাকার হায়াত ধুলকির সঙ্গে একই এলাকার সজীব হাওলাদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় অন্তত পাঁচটি বসতঘর। হাতবোমার আঘাতে একটি এতিমখানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শাওন মাতুব্বরের ডান পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত আরও ১০ জন আহত হন। গুরুতর অবস্থায় শাওনকে রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে মারা যান শাওন।

মৃত্যুর আগে আহতাবস্থায় শাওন মাতুব্বর বলেছেন, ‘আমি একটি এতিমখানার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে বৃষ্টির মতো হাতবোমা নিক্ষেপ করে ওরা (হামলাকারীরা)। একটি হাতবোমা আমার ডান পায়ে লাগলে সেটার আঘাতে আমার ডান পা উড়ে যায়। পরে লোকজন আমাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। যারা এই অবস্থা করেছে, তাদের বিচার চাই।’

শাওনের চাচাতো ভাই কবির মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাওন মারামারির মধ্যে ছিল না। তবু সন্ত্রাসীরা ওরে বোমা ছুড়ে মেরেছে। আমরা জানি না কে এই বোমা ছুড়ে মারছে। যারা ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী, তাদের বিচার চাই আমি।’

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সালমান চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শাওনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাঁর ডান পা বোমার আঘাতে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। রগের সঙ্গে ঝুলে ছিল। তাই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল।

রাত ১১টার দিকে ও আজ সকালে মাদ্রা এলাকায় পরিদর্শনে যান জেলা পুলিশ ও র‍্যাবের কর্মকর্তারা। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখনো কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাসদস্যরা টহলে রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার পরে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।