খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যার ঘটনায় বন্ধুকে গ্রেপ্তার দেখাল পুলিশ

দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকার
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় গোলাম রব্বানী নামের একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। যেদিন এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেদিন রাতেই নগরের গোবর চাকা এলাকার বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। আজ রোববার দুপুরের দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম।

তবে আজ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। আদালত গোলাম রব্বানীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকাল তাঁর রিমান্ড শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

পুলিশ বলছে, গোলাম রব্বানী অর্ণবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন তাঁরা। ঘটনার পর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দেখা গেছে, গোলাম রব্বানীর ফোন পেয়েই তেঁতুলতলার ওই স্থানে গিয়েছিলেন অর্ণব। কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গোলাম রব্বানীর যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। এ কারণেই তাঁর রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

এর আগে অর্ণব সরকার হত্যার ঘটনায় শনিবার রাত ১০টার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন অর্ণবের বাবা নীতিশ কুমার সরকার। মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি, অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জনকে। মামলার এজাহারে হত্যার কারণ হিসেবে সন্দেহজনক কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়নি।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার জন্য নিহত অর্ণবের বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় আসেন। তিনি অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহজনক হিসেবে যে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল আজ রোববার সকালে তাঁদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর গোলাম রব্বানী নামে অর্ণবের এক বন্ধুকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে খুলনা নগরের তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় অর্ণব কুমার সরকারকে গুলি করে হত্যা করেন দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রাতে তেঁতুলতলা মোড়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছিলেন অর্ণব। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা এসে তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি গুলি অর্ণবের মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

অর্ণবদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামে। তাঁর বাবা নীতিশ চন্দ্র সরকার একজন ঠিকাদার। তাঁরা ১৫ বছর ধরে খুলনা নগরের বানরগাতি ইসলাম কমিশনারের মোড় এলাকার করোতোয়া লেনে বাড়ি করে বসবাস করছেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অর্ণব হত্যার সঙ্গে তাঁর বন্ধু গোলাম রব্বানী জড়িত থাকার বেশ কিছু প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যই রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য না করে গোলাম রব্বানীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। গোলাম রব্বানীকে রিমান্ডে নিলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

অর্ণব হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

অর্ণব সরকার খুলনার বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছিলেন। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে নগরের তেঁতুলতলা এলাকায় নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অর্ণব হত্যার প্রতিবাদে ও তাঁকে হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন থেকে অর্ণব হত্যার ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।