চলতি বছরের শুরুর দিকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান (রাব্বি)। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ির বাইরে থাকায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পাশেও সেভাবে থাকতে পারেননি। আন্দোলনের শেষের দিকে ৪ আগস্ট মাগুরা শহরের ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মেহেদী। তাঁর মৃত্যুর চার মাস পর একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন মেহেদীর স্ত্রী রুমি খাতুন। এতে একদিকে আনন্দ পরিবারে নতুন অতিথি, অন্যদিকে বিষাধের ছায়া—মেয়েটি কখনো বাবার স্পর্শ পাবে না।
মেহেদী হাসান জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি পৌরসভার বরুনাতৈল গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে। ৪ আগস্ট তাঁর মৃত্যুর পর গতকাল বুধবার রাতে মাগুরা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে।
স্বজনেরা জানান, চলতি বছরের শুরুতে পারিবারিকভাবে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুমি খাতুনের সঙ্গে মেহেদী হাসানের বিয়ে হয়। আন্দোলনের কারণে তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেননি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুমি খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী তাঁর সন্তানকে দেখে যেতে পারল না। আমার সন্তানও কখনো তার বাবাকে পাবে না। এই কষ্ট আমি কীভাবে ভুলব?’
ছোট ভাইয়ের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে শুনে পরিবারের সবাই খুশি। অন্যদিকে মেহেদীকে হারানোর বেদনা। তাঁর বড় ভাই ইউনুস আলী বলেন, হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে রাব্বির মেয়ের জন্ম হয়েছে। মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ আছেন। প্রথমেই তাঁর মা (মেয়ের দাদি) তাকে কোলে নিয়েছে। তাঁরা ভীষণ খুশি। এই মেয়ের মধ্যে রাব্বি বেঁচে থাকবে। মেয়েটি যাতে বাবার অভাব বুঝতে না পারে, সে ব্যাপারে তাঁরা সবাই সচেষ্ট থাকবেন।
মেহেদীর সন্তান জন্মের পর মাগুরার বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা তাঁর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাব্বি ভাই জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন। আন্দোলন–সংগ্রামে সামনের সারিতে থাকতেন। এ কারণে তাঁকে টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁকে আমরা ভুলব না। তাঁর মেয়ের মধ্যেই আমরা তাঁকে খুঁজব। আমরা সবাই মিলে তাঁর মেয়ের খোঁজখবর রাখব।’
পুলিশ সূত্র জানায়, ছাত্রদল নেতা মেহেদী নিহতের ঘটনায় ১৩ আগস্ট তাঁর ভাই ইউনুস আলী বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, বীরেন শিকদারসহ ১৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক কাজী এহসানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ৪ আগস্ট মেহেদীর মৃত্যুর পর তাঁকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। তদন্তের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত একটা চ্যালেঞ্জ। মরদেহ উত্তোলনের ব্যাপারে পরিবার আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আদালতের নির্দেশে ২ ডিসেম্বর লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।