শরীয়তপুরে বাল্কহেডের ধাক্কায় ভাঙল নির্মাণাধীন সেতুর স্প্যান, আহত ৩ শ্রমিক
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা সদরে কীর্তিনাশা নদীতে নির্মাণাধীন হেঁটে চলাচলের সেতুর (পদচারী–সেতু) একটি স্প্যান বাল্কহেডের ধাক্কায় ভেঙে গেছে। ওই ঘটনায় তিন শ্রমিক আহত হয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন বাল্কহেডের দুই শ্রমিককে আটক করেছে। আর বাল্কহেডটি জব্দ করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নড়িয়া-জাজিরা সড়কের কীর্তিনাশা নদীতে থাকা ভাষাসৈনিক গোলাম মাওলা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশ দিয়ে মানুষের হেঁটে চলাচলের জন্য ওই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সেতুর শ্রমিকেরা বলেন, আজ সকালে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেড নড়াইলে যাচ্ছিল। সকাল ১০টার দিকে বাল্কহেডটি নদীর পূর্ব প্রান্তের সেতুর একটি পিলারে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে একটি স্প্যান বাল্কহেডের ওপর ভেঙে পড়ে। তখন সেখানে কাজ করতে থাকা তিনজন শ্রমিক ছিটকে নদীতে পড়ে আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ ওই সময় বাল্কহেডের শ্রমিক হাসান হাওলাদার (৩০) ও সোহেল কিবরিয়াকে (২৬) আটক করে।
নড়িয়ার মোক্তারের চর এলাকার বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে তাঁরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এখন হেঁটে পারাপারের সেতুর স্প্যান ভেঙে পড়েছে। এতে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আর সেতুর কাজও পিছিয়ে গেল।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও এলাকার লোকজন জানান, নড়িয়া উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে কীর্তিনাশা নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পূর্ব তীরে উপজেলা সদর ও পশ্চিম তীরে মোক্তারের চর, রাজনগর, নশাসন ও জপসা ইউনিয়ন। এ ছাড়া জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন রয়েছে। নড়িয়া উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়কপথে ওই ইউনিয়নগুলো ও জাজিরায় যোগাযোগের জন্য ১৯৯৭ সালে কীর্তিনাশা নদীর ওপর ১০৫ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। সেতুটির নামকরণ করা হয় ভাষাসৈনিক গোলাম মাওলার নামে।
২০১০ সাল থেকে কয়েক বছর সেতুটির আশপাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীভাঙনের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করে এলজিইডি। তখন সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৫ মিটার সেতু নির্মাণ করার জন্য নাভানা কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ ফেলে প্রতিষ্ঠানটি চলে যায়।
এরপর ২০২১ সালে পুনরায় দরপত্র দেওয়া হয়। এ দফায় সেতুটির সঙ্গে ভায়াডাক্ট যুক্ত করে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হয়। ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০৫ মিটার সেতু ও ২২২ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণের কাজ পায় কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারিখে কার্যাদেশ পায় তারা। চলতি বছরের ৯ জুন প্রতিষ্ঠানটির কাজের মেয়াদ শেষ। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, নতুন সেতু নির্মাণ করার কারণে পুরোনো সেতুটি গত বছরের ডিসেম্বরে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের পারাপার করার জন্য এলজিইডি দুটি ট্রলার দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে আরও দুটি ট্রলার দিয়ে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে একটি ট্রলারে দুর্ঘটনা ঘটে। তখন পদচারী-সেতু নির্মাণের দাবি তোলা হয়। এরপর ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই পদচারী-সেতুটি নির্মাণ শুরু করা হয় গত মে মাসে। ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই পদচারী-সেতুতে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি ৫টি স্প্যান বসানোর কথা। ইতিমধ্যে চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে, যার একটি গতকাল ভেঙে পড়েছে।
কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সেতুর নির্মাণকাজ করছেন আবদুল ওয়াহাব মাদবর নামের এক ব্যবসায়ী। কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল করলেও তিনি কল ধরেননি।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রাফেউল ইসলাম বলেন, গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। যেহেতু খরস্রোতা নদী তাই মানুষের পারাপারের জন্য একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হচ্ছিল। বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি স্প্যান ভেঙে পড়েছে। তাঁরা ওই বাল্কহেডের চালকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। আর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।