নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ভ্যানে ফেরি করে চলছে ইলিশ বিক্রি

প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রকাশ্যে ভ্যানে ফেরি করে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গত রোববার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু এর মধ্যেই পাবনার বেড়া উপজেলায় অবাধে ইলিশ শিকার চলছে। সেই ইলিশ পদ্মা ও যমুনাপাড়ে নৌকায় করে, কখনো প্রত্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে ফেরি করেও  ইলিশ বিক্রি চলছে।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইলিশের প্রজননের মৌসুম উপলক্ষে পাবনার বেড়া উপজেলার হুরাসাগর, পদ্মা ও যমুনা নদ-নদীর বিভিন্ন অংশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান চলছে। অভিযানে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ টাকা দামের ১৫ হাজার মিটার জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তিনজনকে আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ১১ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরগুলোতে এর চেয়ে অনেক বেশি অভিযান যেমন হয়েছে, তেমনি সাজা পেয়েছেনও অনেকে। ব্যাপক অভিযানের কারণে গত বছরগুলোতে ইলিশ ধরা ও বিক্রি ছিল অনেক কম। কিন্তু এবার প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগে নদীতে দেদার ইলিশ ধরা চলছে। সেগুলো বিক্রিও হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যে।

আরও পড়ুন

তবে বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন দাবি করেন, প্রশাসনের সহায়তায় তিনি নিষেধাজ্ঞা শুরুর প্রথম দিন (১৩ অক্টোবর) থেকেই রাত-দিন নদী ও ডাঙায় অভিযান চালিয়ে আসছেন। যেসব জায়গায় ইলিশ ধরা ও বিক্রির অভিযোগ আসছে, সেখানে কয়েক দলে ভাগ হয়ে বারবার অভিযান চালানো হচ্ছে। এবার প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানের বিষয়টি ঠিক নয়। বরং প্রশাসন এবার যথেষ্ট আন্তরিক ও কার্যকরী ভূমিকায় ইলিশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করা হচ্ছে ইলিশ। রোববার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

রবি ও সোমবার যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত উপজেলার নটাখোলা, কাজীরহাট, মাসুমদিয়া, বাঁধেরহাট এবং পদ্মা নদীর তীরবর্তী ঢালারচর ও সিদ্দিকবাজার এলাকা ঘুরে অবাধে ইলিশ বেচাকেনা লক্ষ করা গেছে। এ সময়ের মধ্যে যমুনা ও পদ্মা নদী থেকে ইলিশ ধরে অনেক নৌকাকে তীরে ফিরছে। ইলিশ নিয়ে নৌকাগুলো তীরে ভেড়া মাত্রই অপেক্ষায় থাকা ক্রেতারা সেখান থেকে ইলিশ কিনছেন। ইলিশ ধরে ফেরার পর জেলেদের নৌকাতেই জাল পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখতে দেখা যায়।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী কাজীরহাট, কল্যাণপুর ও ঢালারচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বাড়িতেই ইলিশ রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিবছর এসব গ্রামের অনেকেই প্রজনন মৌসুম এলে পদ্মা–যমুনা থেকে ইলিশ ধরা ও বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা ইলিশ ধরে অথবা জেলেদের কাছ থেকে কিনে তা বরফের বাক্সে (পেটি) রাখেন। ইলিশের ক্রেতারা এসব গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি বা রাস্তা থেকেই সেগুলো দরদাম করে কিনে থাকেন।

আরও পড়ুন

রোববার মাসুমদিয়া গ্রামের সড়কে ভ্যানে ইলিশ বিক্রির ছবি তুলতে গেলে আপত্তি জানান বিক্রেতা। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নৌকায় করে জেলেরা মাছ নিয়ে তীরে আসার পর তাঁর মতো অনেকেই তা কিনে ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি করছেন। তবে প্রশাসনের অভিযানের ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে বলে জানান।

মাসুমদিয়া ভবানীপুর কেজিবি কলেজের শিক্ষক আলাউল হোসেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এর আগের বছরগুলোতে এভাবে ভ্যানে করে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রি হতে দেখিনি। অথচ এবার দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এভাবে ইলিশ ধরা ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত সবার ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।’

এদিকে ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত জেলে ও বিক্রেতারা জানান, এবার বড় আকারের ইলিশ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ ইলিশের আকার ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। এক কেজির ওপর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে খুব কম। সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভ্যানে ফেরি করে ইলিশ বিক্রির বিষয়টি জানা নেই। তবে এই প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও বিক্রির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’