লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়ে উধাও ২৩টি সমবায় প্রতিষ্ঠানের মালিক, টাকা ফেরত পেতে গ্রাহকদের বিক্ষোভ
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন গ্রাহকেরা। আজ রোববার সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, তাঁরা কষ্টার্জিত টাকা লাভের আশায় সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা প্রায় দুই বছর ধরে আত্মগোপনে। গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি নিয়ে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
কর্মসূচি পালনের জন্য সকালে বাস, পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে হাজারো গ্রাহক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আসেন। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন তাঁরা। আমানতের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে তাঁরা সেখানে বসে পড়েন। এর আগে একই দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করেন তাঁরা। ২৪ ফেব্রুয়ারি মাদারগঞ্জ উপজেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী, সদস্য মাহবুব আলম, মাহফুজুর রহমান, বিএনপি নেতা মোখলেছুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। শিবলুল বারী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো কথাবার্তা বলছে। প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু এই নয় যে আমরা বিশৃঙ্খলা করতে পারব না। টাকা উদ্ধারে আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত। আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা সবকিছু অচল করে দেওয়ার সক্ষমতাও রাখি। আজ যদি আমরা ভালো কোনো সংবাদ না পাই, তাহলে আমরা সড়কে নামতে বাধ্য হব। দীর্ঘ সময় ধরে এই গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।’
সমিতিগুলোর মালিকপক্ষের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে ধরছে না অভিযোগ করে শিবলুল বারী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কত আসামি ধরে, কিন্তু মালিকপক্ষের কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। ঈদের আগেই যাঁদের বিরুদ্ধের ওয়ারেন্ট আছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে। জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাঁরা এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন তাঁরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধুন অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকেরা যাতে তাঁদের টাকা ফেরত পান, সম্প্রতি সে জন্য সর্বস্তরের প্রশাসন নিয়ে বসেছিলাম। টাকা উদ্ধারে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, তাঁদের গ্রেপ্তারে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারে আমরাও চেষ্টা করছি; কিন্তু এটা তো দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে সম্ভব নয়। সময় তো দিতেই হবে। তবে আমরা গ্রাহকদের পক্ষে রয়েছি।’
২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোস্তাফিজ, স্বদেশ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমবায় সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়া যায়।