‘ট্যাকার অভাবোত চাউল কিনব্যার পাইনে, গরোম কাপড়া কিনমো ক্যামন করি’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পোড়ারচর এলাকায় আজ শনিবার দুপুরে কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল পেয়ে খুশি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাজিরচর গ্রামের শামছি বেগমছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে কামারজানি নৌঘাট। এখান থেকে নৌকাযোগে আধা ঘণ্টার পথ। নৌকা থেকে নামার পর বালুচরে প্রায় ২৫ মিনিট হেঁটে যেতে হয়। তারপর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ারচর এলাকা। এলাকাটির চারদিকে তিস্তা নদীবেষ্টিত। দেখতে দ্বীপের মতো।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে গাইবান্ধা বন্ধুসভার সদস্যরা পিকআপ-ভ্যান, নৌকা ও শেষে মাথায় করে কম্বল নিয়ে সেখানে যান। সেগুলো বিতরণ করা হয় স্থানীয় ২০০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ দুপুরে উপজেলার কামারজানি ও গিদারি ইউনিয়নের মানুষকে এসব কম্বল দেওয়া হয়। এর আগে গাইবান্ধা বন্ধুসভার সদস্যরা গতকাল শুক্রবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করেন।

কম্বল পেয়ে উপজেলার উত্তর গিদারি গ্রামের বাসিন্দা ওমর আলী (৬৫) বলেন, ‘এ্যাকবেলা না খায়া থাকান যায়, কিনতো জারের (শীত) কসটে আইতোত নিন (ঘুম) ধরে না। ট্যাকার অভাবোত চাউল কিনব্যার পাইনে, গরোম কাপড়া কিনমো ক্যামন করি। একাত ওকাত হয়া আইত (রাত) কাটাই। আচকে তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বলকোনা প্যায়্যা ভালো হলো। আইতোত কমবোল কোনা গাওত (গায়ে) দিয়া আরাম করি নিন (ঘুম) পারব্যার পামো।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পোড়ারচর এলাকায় আজ শনিবার দুপুরে কম্বল বিতরণ করা হয়। বন্ধুসভার সদস্যরা কম্বল বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ১২ হাজার লোক–অধ্যুষিত কাপাসিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা ভাঙনকবলিত। প্রতিবছর নদীতে আবাদি জমি ভেঙে চর জেগে উঠছে। এর মধ্যে পোড়ারচর, খানাবাড়ী, কাজিয়ারচর, ভাটি বোজাগাড়ি গ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতিবছর তিস্তার ভাঙনের ফলে এসব গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। নদী তীরবর্তী এসব গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ গরিব, অসহায়। একসময়ের গৃহস্থরা এখন নদীভাঙনে নিঃস্ব। তাঁদের অনেকে নদীতে মাছ শিকার করেন। অনেকে রিকশা চালান, অনেকে দিনমজুরের কাজ করেন। এভাবে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন। কাপাসিয়া–সংলগ্ন সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নেরও একই অবস্থা।

বিতরণস্থল পোড়ারচরে খোলা জায়গায় সকাল থেকেই কম্বলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একই গ্রামের নালো মিয়া (৭৬)। কম্বল পেয়ে তিনি দুই হাত তুলে দোয়া করেন। তিনি বলেন, ‘এবারক্যা শিতোত কাউয়ো কমবোল দ্যায় নাই। এ্যাকনা কম্বলের জন্যে চেয়ারম্যানের বাড়িত গেচিনো। তাই হামাক কম্বল দেয় নাই। খালি কয়, সোরকার দ্যায় না, হামরা কোনটে থাকি দেমো। তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বল প্যায়া উপোকার হলো, আল্লায় তোমাঘরে ভালো করুক বাবা।’

কম্বল পাওয়া কামারজানি গ্রামের হালিমা বেগম (৬০) বলেন, ‘তিনবচর থাকি কোনো সরকারি কম্বল পাই নাই। আচক্যা তোমারঘরে আলোর কম্বল পানো। ছোট নাতিটা শিতের কসটে নিন (ঘুম) পারব্যার পায় না। অ্যাচকা রাতোত নাতিটাক নিয়্যা ঘুম পারব্যার পামো।’

নৌকাযোগে কম্বল নিয়ে ফিরছেন নারী-পুরুষেরা

পোড়ারচর গ্রামের সমাজকর্মী রেজাউল করিম বলেন, এখানকার দরিদ্র মানুষ দুই বেলা ঠিকমতো খেতে পারেন না। তাঁদের জন্য গরম কাপড় কেনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলো নিজের দায়িত্বের বাইরে মানবিক কাজগুলো করছে। বিশেষত শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা বন্ধুসভার উপদেষ্টা জিয়াউর রহমান, সহসভাপতি মেহেদী হাসান, রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা, অর্থ সম্পাদক নিশাত তাসনিন, সদস্য নিফাউল ইসলাম, লিয়া খাতুন এবং প্রথম আলোর প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন প্রমুখ।

শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেড। এই টাকায় ক্রয়কৃত ২০০টি কম্বল গাইবান্ধায় বিতরণ করা হয়। দরিদ্র মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও।

সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০০০১১১৯৪
রাউটিং নম্বর: ০৮৫২৬২৫৩৯
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা
বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।
এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশান অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।