রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা, বেতন তুলতে পারছেন না শিক্ষক-কর্মকর্তারা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও এখনো অচলাবস্থা কাটেনি। সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনের ৩৮ জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের বিষয়টি অনুমোদিত হয়নি। আগস্ট মাসের বেতন কবে পাবেন, তা এখনো অনিশ্চিত। সেই সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন মোট ৭৭৪ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে ২০৫ জন শিক্ষক, ১৩২ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ৪০৩ জন, মাস্টার রোলে ২৪ জন। উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম চলমান রাখতে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন

গত ২৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলামের সই করা এক চিঠিতে এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জানানো হয়েছিল। তবে সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য ১ সেপ্টেম্বর ডিনস কমিটিতে একটি সভা হয়। এতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোরশেদ হোসেনকে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এ নিয়োগের বিরোধিতা করেন। এ অবস্থায় যোগদানের পরদিন মোরশেদ হোসেন পদত্যাগ করেন।

কলা অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয় রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষের স্বাক্ষরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন আর রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটিতে আছেন। ফলে আগস্টের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারেননি কেউ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, ১৪ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও প্রশাসনিক পদগুলো শূন্য হওয়ায় কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। আর প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু না করার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে না। প্রশাসনিক দপ্তরগুলো খোলা হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু যাওয়া-আসা করছেন, কোনো দাপ্তরিক কাজ করতে পারছেন না। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদে ২২টি বিভাগ খোলা থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রম চলছে না।

এই পরিস্থিতিতে করণীয় প্রসঙ্গে কথা হয় অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে অভিভাবকশূন্য। দ্রুততম সময়ে একজন যোগ্য ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া জরুরি। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারলে বিদ্যমান সমস্যা দূর করা সম্ভব। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হওয়াও জরুরি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দিয়ে শিক্ষাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ করায় বেতন–ভাতা উত্তোলনের বিষয়টিও থেমে আছে।