শতক ছাড়াল লাল–সবুজের পতাকাবাহী জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে কেএসআরএম গ্রুপের নতুন জাহাজ এমভি জাহান–১। আজ সকালেছবি : প্রথম আলো

বাংলাদেশের লাল–সবুজের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা শতক ছাড়িয়েছে। স্থায়ী ও অস্থায়ী নিবন্ধনসহ দেশের বহরে এখন সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ১০১টি। স্থায়ী নিবন্ধনের জন্য সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছেছে কেএসআরএম গ্রুপের জাহাজ এমভি জাহান–১। জাহাজটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৩ কর্মকর্তা ও নাবিকের।

আজ বুধবার বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত জাহাজটিতে গিয়ে পরিদর্শন করেন নৌবাণিজ্য অফিসের মুখ্য কর্মকর্তা ও রেজিস্ট্রার অব বাংলাদেশ শিপস ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ। এ সময় জাহাজটির বিভিন্ন সনদ যাচাই–বাছাই ও জাহাজের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করেন তিনি।

পরিদর্শন শেষে জাহাজের চত্বরে প্রথম আলোকে সাব্বির মাহমুদ বলেন, ২০১৮ সালে তৈরি হলেও জাহাজটি অনেকটা নতুনের মতো। শুধু তা–ই নয়, গত কয়েক বছরে দেশের বহরে যেসব জাহাজ যুক্ত হয়েছে, সেগুলোর গড় বয়স ১০ বছরের কম।

সাব্বির মাহমুদ বলেন, গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা একের পর এক জাহাজ বহরে যুক্ত করেছেন। এভাবে বাড়তে থাকলে ২০২৮ সালে দেশি জাহাজের সংখ্যা দুই শতকে উন্নীত হবে বলে আশা করেন তিনি।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, কেএসআরএম গ্রুপ এই জাহাজ কিনেছে ২ কোটি ৭২ লাখ ডলারে। প্রায় ২০০ মিটার লম্বা এই জাহাজটির পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৬১ হাজার টন। সব মিলিয়ে গ্রুপটির বহরে এখন যে ২৪টি জাহাজ রয়েছে, তাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৩০ কোটি ডলারের বেশি।

কেএসআরএম গ্রুপ সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসায় এমন সময়ে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করেছে, যখন গ্রুপটির জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দুই মাস আগে দস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে। দুই দশক আগে সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনার ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার পর দেশের এ খাত এগিয়ে নিয়েছে গ্রুপটি।

জানতে চাইলে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই খাতে সরকারি নীতি এখন অনেক বেশি বিনিয়োগবান্ধব। এ কারণে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করছি আমরা। এতে দেশের যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তেমনি দক্ষ পেশাজীবীর কর্মসংস্থান হচ্ছে।’

কর্ণফুলী নদী থেকে লাইটার জাহাজে করে এমভি জাহান–১ জাহাজে আসা–যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে দেখা যায়, বন্দরের বহির্নোঙর এখন দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সরব উপস্থিতি। আজ চট্টগ্রাম বন্দরে ১০৩টি জাহাজ অবস্থান করছিল। এর মধ্যে ২৩টি জাহাজ ছিল দেশের পতাকাবাহী, যেগুলো পণ্য আনা–নেওয়া করছে। এর মধ্যে ছয়টি জাহাজই কেএসআরএম গ্রুপের।

কেএসআরএম গ্রুপের বহরে সর্বশেষ যুক্ত হওয়া এমভি জাহান–১ জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে ৫৯ হাজার ৮০০ টন কয়লা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে নোঙর করেছে। বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার এই কয়লার আমদানিকারক। আজ জাহাজটির দুই পাশে দুটি লাইটার জাহাজ রেখে জাহাজের ক্রেন দিয়ে কয়লা খালাস করতে দেখা যায়।

নৌবাণিজ্য অফিসের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ প্রথম আলোকে জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৬১টি সমুদ্রগামী জাহাজের নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি জাহাজ এখন বহরে রয়েছে। বাকিগুলো চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ভাঙার জন্য বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে জাহাজ ব্যবসা শুরু হয়েছে ৪৬ বছর আগে। শুরুর দিকে নেতৃত্ব দেওয়া এটলাস শিপিং, সমুদ্রযাত্রা শিপিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নেই। এখন বিনিয়োগ করছে মূলত বড় শিল্পগ্রুপগুলো। তাদের হাত ধরে বিদেশের বন্দর থেকে বন্দরে ছুটছে লাল–সবুজের পতাকাবাহী জাহাজ ।