বগুড়ায় গুলিবিদ্ধ শ্রমিক দল কর্মীর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

আবু রায়হান ওরফে রাইমছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আবু রায়হান ওরফে রাইম (৩১) নামের আরও একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন অবস্থান তিনি মারা যান।

আবু রায়হানের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর স্বজনেরা। নিহত আবু রায়হান দুপচাঁচিয়া সদরের চকসুখানগাড়ি মহল্লার মৃত শাজাহান আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একটি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহকারী (ডেলিভারি ম্যান) ছিলেন।

এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২। ৪ আগস্ট দুপচাঁচিয়া পুলিশের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম (২২) নিহত হন। মনিরুল কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে। তিনি বদলগাছী বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

আরও পড়ুন

নিহত আবু রায়হানের ছোট ভাই মো. বায়েজিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বড় ভাই বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে ৪ আগস্ট আবু রায়হান দুপচাঁচিয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দেন। পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হলে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর ডান ও বাঁ পায়ে গুলি লেগে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ৫ আগস্ট তাঁকে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরদিন সেখান থেকে তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আবু রায়হান মারা যান।

আবু রায়হানের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, পুলিশের গুলিতে নিহত আবু রায়হান বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

আরও পড়ুন

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পরে দুপচাঁচিয়া থানা ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ দুপুর ১২টার দিকে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আবু রায়হানসহ পাঁচজন। আহত হন ৪৪ জন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কলেজছাত্র মনিরুলের লাশ নিয়ে মিছিল বের করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও তাঁর বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন হামলাকারীরা। তাঁর বাসভবনের গ্যারেজে ইউএনও ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দুটি সরকারি পাজেরো গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আজ শুক্রবার পর্যন্ত বগুড়া জেলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি। নিহত ১২ জনের মধ্যে ৪ আগস্ট দুপচাঁচিয়া সদরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৪ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিরা হলেন বগুড়া সদরের আবদুল মান্নান সরকার (৬০), শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়া এলাকার শিমুল ওরফে মতি (৪৫), আকাশতারা এলাকার কমর উদ্দিন বাপ্পী (২৫), বগুড়া সদরের হরিগাড়ি এলাকার শিক্ষক সেলিম রেজা (৪৫) ও গাবতলীর গোড়দহ গ্রামের জিল্লুর রহমান (৩৫)। এ ছাড়া ৫ আগস্ট সদর থানা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয়েছেন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শহরের মালগ্রাম দীঘিপাড়া ও শাজাহানপুর উপজেলার খড়না বাজারে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বগুড়া পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য রানা পাইকার (৩৪) ও শাজাহানপুর উপজেলার খড়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আলমকে (২৮)। রানা পাইকার বগুড়া শহরের চাপড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও নুর আলম শাজাহানপুরের খড়না ইউনিয়নের দেশমা গ্রামের বাসিন্দা।

এর আগে ১৯ আগস্ট শহরের স্টেশন সড়কের জামতলা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত হয় পথশিশু সিয়াম ওরফে শুভ (১৬)। এ ছাড়া ২০ জুলাই গুলিতে নিহত হন শিবগঞ্জ উপজেলার পঞ্চদাস গ্রামের রিকশাচালক রনি প্রামাণিক (২৮)।