ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করতে বিএনপি পরিচয়ে হামলা, লুটপাট
বগুড়ার শেরপুরে ভূমিহীন একটি পরিবারকে খাস জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে বিএনপির নেতা-কর্মী পরিচয়ে একদল অস্ত্রধারী বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের দড়িমুকুন্দ গ্রামের ভূমিহীন আবদুল আলিমের বাড়িতে এ হামলা হয়। প্রতিবেশী আবদুস সোবহান, তাঁর দুই ছেলে মাহফুজ ও বেনজির এ হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ আবদুল আলিমের।
হামলার খবর পেয়ে দড়িমুকুন্দ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় আবদুল আলিমের বসতবাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। লুটতরাজ করা হয়েছে বসতঘরের সব আসবাব, ঘটিবাটি, চাল-ডাল, কাপড়, টাকাপয়সা, সোনার গয়না, বৈদ্যুতিক পণ্য, নলকূপ থেকে শুরু করে ঘরের চাল পর্যন্ত।
আবদুল আলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকে তিন পুরুষ ধরে এই খাস জায়গায় বসবাস করে আসছেন। জায়গাটুকুতে নজর পড়েছে প্রতিবেশী আবদুস সোবহানের। প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি নানাভাবে ওই জায়গা থেকে সপরিবার উচ্ছেদের চেষ্টা করে আসছিলেন। এ নিয়ে থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে বিচার–সালিসও হয়েছে একাধিকবার। মাথাগোঁজার মতো কোনো জায়গা না থাকায় এক খণ্ড খাস জায়গা বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। খাস ওই জায়গাটুকুতে নজর পড়ে গ্রামের প্রভাবশালী আবদুস সোবহানের। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগে বুধবার সোবহান বিএনপি পরিচয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে বসতঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।
আবদুল আলিমের ছেলে ইমরান ঢাকা কলেজে মাস্টার্সে পড়েন। মেয়ে পড়েন রাজধানীর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবদুল আলিমের স্ত্রী আঙ্গুর বেগম বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবদুস সোবহান ও তাঁর দুই ছেলের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রধারী ৫০ থেকে ৬০ বিএনপির নেতা-কর্মী পরিচয়ে বসতবাড়িতে হামলা ও মারধর শুরু করে। সন্ত্রাসীরা তাঁর ছেলে-মেয়েকে হত্যার জন্য খুঁজতে থাকলে প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা দৌড়ে গ্রামের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা দুই ঘণ্টা ধরে মাটির দেয়াল তোলা ঘর ভেঙে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। চাল-ডাল, ঘটিবাটি থেকে শুরু করে ঘরের সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। তাঁরা বাড়ি নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ধারদেনা করে মোট পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করেছেন। হামলাকারীরা সেই টাকাও লুট করে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, ওই জায়গাটির মালিক তিনি। জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি জায়গাটি বুঝে নিয়েছেন। জায়গা বুঝে নিতে আসা লোকজন সবাই তাঁর ছেলের বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন। তাঁরা বিএনপির রাজনীতি করেন।
হামলার খবর পেয়ে ছুটে যান সেনাবাহিনীর টহল দল, শেরপুর উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা, মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, হামলাকারীরা বিএনপির কেউ নন। তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসী। স্থানীয় বিএনপির নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা বিষয়টি দেখবেন।
এদিকে বুধবার নন্দীগ্রাম পৌরসভা ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের পারশুন স্কুলের সামনে বউবাজার এলাকায় বিএনপি নেতা মাসুদ রানার নেতৃত্বে বিএনপি নেতা–কর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা নন্দীগ্রাম পৌরসভায় হামলা ও ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের শহরের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুকুল হোসেন, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেনের বাসা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
নন্দীগ্রাম পৌর শহরের রহমান নগর এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফারুক কামালের বাড়িতেও হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। ফারুক কামাল নন্দীগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি। তিনি বলেন, ‘হামলার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। হামলাকারীরা বাসায় এসে তাণ্ডব শুরু করে। প্রাণভয়ে আমার পরিবারের সদস্যরা পাশের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা দিনভর উপজেলা সদরে এই তাণ্ডব চালালেও দেখার কেউ নেই।’
নন্দীগ্রামে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনায় তিনি লজ্জিত। বারবার দল থেকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সহিংসতাকারীদের চিহ্নিত করে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।