দুর্বৃত্তদের মারধরে গুরুতর আহত নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। এ ঘটনায় তাঁর ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে নাটোর সদর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আজ সকাল সাড়ে সাতটায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে থাকা তাঁর বড় ভাই এমদাদুল হক প্রথম আলোকে জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর ভাইকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণ করে রাতেই তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত দুইটার দিকে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ সকাল পর্যন্ত তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। তিনি অচেতন অবস্থায় রয়েছেন।
এর আগে সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেনের ভাই এমদাদুল হক ও সহযোগী আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। তখন দেলোয়ার হোসেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের শ্যালক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীবের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন।
লুৎফুল হাবীব উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে তিনিই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। যদিও লুৎফুল হাবীব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গতকাল বিকেল চারটার কিছুক্ষণ পরে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুজন গণমাধ্যমকর্মী প্রথম আলোকে জানান, দুর্বৃত্তরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি মাইক্রোবাস ও একটি ব্যক্তিগত গাড়ি রেখে পাশের জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকে। ছয় থেকে সাতজন দুর্বৃত্ত ওই কার্যালয়ের সিঁড়ি থেকে দেলোয়ার হোসেনকে ধরেন এবং কিলঘুষি মারতে মারতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রাখা মাইক্রোবাসে তোলে। পরে দুটি গাড়ি বগুড়া মহাসড়ক হয়ে সিংড়া উপজেলার দিকে চলে যায়। ভিডিও ফুটেজে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর ছবি দেখা গেছে; যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা, গ্রেপ্তার ২
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার খবর ও ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর পরই পুলিশ আহত প্রার্থীর মেজ ভাই মজিবুর রহমানকে সদর থানায় ডেকে নেয়। সেখানে তিনি বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পরে এটি সদর থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। মামলার পরপরই পুলিশ সিংড়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের নাম-পরিচয় পরে জানাবেন বলে তিনি জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সুপার ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে সমস্যা হবে না। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। ফুটেজ পরীক্ষা করে আসামিদের শনাক্ত করা হবে। এ ছাড়া ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের নম্বর ও মালিকানার তথ্যও পুলিশের হাতে রয়েছে।