জাহাঙ্গীরনগরে বিকেল ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ, প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে হামলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট শেষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। আজ বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকেছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আজ বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের আজ বিকেল চারটার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সিন্ডিকেট সভা চলাকালে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে শতাধিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে এলে আন্দোলনকারীরা জুতা নিক্ষেপ করেন এবং চেয়ারসহ প্রশাসনিক ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর শুরু করেন।

এর আগে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে আন্দোলনকারীদের অবস্থান
ছবি: শামসুজ্জামান

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সিন্ডিকেট সভা চলছিল। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন। পরে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার আবু হাসান সিন্ডিকেটের নেওয়া সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা জুতা নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসনিক ভবনে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায়।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, একটা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ছাত্রলীগ ও কিছু বহিরাগতরা হামলা চালায় তাদের ওপর। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে আন্দোলনকারীদের পালটা ধাওয়ায় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস ছাড়া হয়। মূলত এই যৌক্তিক আন্দোলন থামাতে এবং ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হলে ফেরাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আন্দোলনকারীদের একজন হাসিব জামান বলেন, ‘সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রশাসন তাদের ব্যর্থতার দায় ঢাকতে এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচার না করতে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে সাজোয়া যানসহ পুলিশ সদস্যদের অবস্থান
ছবি: প্রথম আলো

বেলা পৌনে একটার দিকে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে সাঁজোয়া যানসহ প্রায় ১০০ পুলিশ সদস্য অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও একই সড়কে পুলিশের বিপরীত দিকে অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা হ্যান্ড মাইকে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে চান এবং পুলিশকে ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে অনুরোধ জানান। বেলা দেড়টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিতে ক্যাম্পাসে জানমালের রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন বিঘ্নিত না হয় সে জন্যই আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি।’