খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল বুধবার পরিবহনশ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা টার্মিনালে হামলা চালাতে আসছেন। সঙ্গে সঙ্গে টার্মিনাল থেকে বাসগুলো সরিয়ে নিতে শুরু করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় টার্মিনাল। বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১৮টি রুটে বাস চলাচল করে। গুজব ছড়ানোর পর বাস চলাচল বন্ধ ছিল। যে যার মতো করে গাড়ি নিরাপদ স্থানে নিয়ে রাখে। তিনটার দিকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হলেও তখনো সব বাস টার্মিনালে ফিরে আসেনি।
শিক্ষার্থী ও পরিবহনশ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ থেকে একটি বাসে করে খুলনায় আসার সময় ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে বুধবার বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বাসশ্রমিকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। নগরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে যাওয়ার পর সেখানকার পরিবহনশ্রমিকেরা ওই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী এসে টার্মিনালে জড়ো হন। তখন পরিবহনশ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে টার্মিনাল মোড় অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন তাঁরা। তবে ঘোষণা দিয়ে আসেন সকাল ১০টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আবারও অবরোধ করবেন শিক্ষার্থীরা।
খুলনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহিদ হোসেন খান সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা টার্মিনালে হামলা করতে আসছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মালিকেরা বাসগুলো নিরাপদ স্থানে নিয়ে রাখার কথা বলেছিলেন। সে জন্য সবাই বাস নিরাপদ স্থানে নিয়ে রেখেছে। বেলা ৩টার দিকে আবার বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক নাজমুস সাদাত আজ বিকেল ৪টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহনশ্রমিকদের হামলায় অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সকালে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছেন। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট রয়েছেন।
তিন পরিবহনশ্রমিক গ্রেপ্তার
শিক্ষার্থী ও পরিবহনশ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৫০-৬০ জনকে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে দুজন ও আজ বৃহস্পতিবার সকালে একজনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন রাজীব পরিবহনের ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন ও চালক আবু বক্কর এবং এম জামান পরিবহনের চালক মো. আল আমীন।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে মামলা হওয়ার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।