বগুড়ায় পালপাড়ায় হামলায় জড়িতরা আওয়ামী লীগের সমর্থক: বিএনপি

বগুড়া জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নেতারা। আজ বুধবার বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ী সড়কের বিএনপির দলীয় কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বামুনিয়া পালপাড়ায় ১৩ জনের নেতৃত্বে ৫ আগস্ট রাতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা বিএনপি। আজ বুধবার দলের সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়, হামলাকারীরা কেউ বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাঁরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। হামলার পর থেকেই বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন।

বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আজ সরেজমিনে বামুনিয়া পালপাড়া পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাইফুল ইসলাম, বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাসেত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার, যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন এবং গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটন উপস্থিত ছিলেন।

পালপাড়ায় বসতবাড়িতে হামলা–ভাঙুচর করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বামুনিয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর ছাত্র-জনতা সর্বত্র আনন্দমিছিল বের করেন। এ সুযোগে ওই দিন রাতে বামুনিয়া পালপাড়ায় সংখ্যালঘু কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। লুট করা হয় সংখ্যালঘু এক কৃষকের গোয়ালঘর থেকে চারটি গরু। মঙ্গলবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে। তাৎক্ষণিক তিনি পালপাড়া পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন

রেজাউল করিম বলেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার বামুনিয়া পালপাড়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা বিএনপির কেউ নন। জহুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ সমর্থকসহ ১৩ জনের নেতৃত্বে এ হামলা ও লুটপাট হয়। ২০১৬ সালেও জহরুল ইসলামের নেতৃত্বে পালপাড়ায় হামলা হয়েছিল। হামলাকারীরা সংখ্যালঘু এক কৃষকের চারটি গরু লুট করে নিয়ে যান। হামলার রাত থেকেই বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা পালপাড়া পাহারা দিচ্ছেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটন সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের চাপ দিয়ে সংখ্যালঘু কৃষকের লুট করা তিনটি গরু উদ্ধার করে দিয়েছেন। এখনো একটি গরু উদ্ধার করা যায়নি।

হেলালুজ্জামান তালুকদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাবতলী শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মভিটা। গাবতলীর মাটিতে সংখ্যালঘু কিংবা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যাতে আক্রমণের শিকার না হন, এ জন্য সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত পালপাড়া ছাড়া অন্য কোথাও হামলার ঘটনা ঘটেনি।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বাসেদ বলেন, পালপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন জহুরুল ইসলামসহ ১৩ জন। তাঁরা বিএনপির কেউ নন। আওয়ামী লীগের সমর্থক। গাবতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এক নেতার কর্মী ছিলেন হামলাকারীরা। নিজ দলের সংখ্যালঘু এক প্রার্থীকে ভোট দেওয়ায় পালপাড়ায় এ হামলা হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাতে দেড় শতাধিক ব্যক্তি লাঠিসোঁটাসহ দেশি ধারালো অস্ত্র হাতে পালপাড়ায় হামলা করেন। এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ১০টি বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট করা হয়। সংখ্যালঘু এক কৃষকের গোয়ালঘর থেকে লুট করা হয় চারটি গরু। সেই থেকে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে পালপাড়ায়। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পালপাড়াবাসী। পাড়ার পুরুষেরা রাত জেগে দল বেঁধে পাহারা দেন।