‘৫০টা ট্যাকার জন্নি বিটা হারি গ্যালো রে’

খুনপ্রতীকী ছবি

‘৫০টা ট্যাকার জন্নি বিটা হারি গ্যালো রে…। আমার বিটা ক্যানে বুলল না, আমার মার কাচতি নি আইনে দিচ্চিরে...বিটা আমার বিটা...।’ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এভাবে বিলাপ করে যাচ্ছিলেন ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত ইমরান চৌধুরীর (২২) মা আফরোজা বেগম। সন্তানহারা মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আত্মীয়স্বজনও সমানে কাঁদছিলেন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী ইউনিয়নের বকসীপুর গ্রামে গত সোমবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে ইমরান চৌধুরীকে পূর্ববিরোধের জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী ইউনিয়নের বকসীপুর গ্রামে গত সোমবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে ইমরান চৌধুরীকে পূর্ববিরোধের জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।

ইমরানের বাবা-মায়ের ভাষ্যমতে, মাত্র ৫০ টাকা পাওয়া নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁদের ছেলেকে সোমবার দিবাগত রাতে একই গ্রামের মুকছার আলীর ছেলে ঝন্টু মিয়া (৪৪) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইমরানের বন্ধু ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বকসীপুর গ্রামের ইব্রাহিমকে (২৩) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে বকসীপুর গ্রামে নিহত ইমরানের বাড়িতে গিয়ে স্বজনহারা মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। ইমরানের মা আফরোজা বেগম একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন। তাঁকে আত্মীয়স্বজন সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মিনারুল-আফরোজা দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ের দুজনই বিবাহিত। ইমরান বড়, মেয়ে অন্তরা ছোট। অজিহা নামে দেড় মাস বয়সী একটি শিশুসন্তান আছে ইমরানের। ঘটনার সময় ইমরানের স্ত্রী সুমাইয়া শিশু অজিহাকে নিয়ে বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গোবিন্দপুরে ছিলেন।

নিহতের মা আফরোজা বলেন, তাঁর ছেলে পেশায় টাইলসের মিস্ত্রি। ইব্রাহিম তাঁর বন্ধু। সোমবার দিবাগত রাতে ইমরান ও ইব্রাহিম একসঙ্গে খাবার খান। খাওয়া শেষ হলে ইমরানের কাছে ফোন আসে। ফোন পেয়ে পাঁচ মিনিটের কথা বলে দুজনই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশীরা খবর দেন, ইমরানকে মাদক ব্যবসায়ী ঝন্টু কুপিয়ে হত্যা করেছেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইমরান খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ঝন্টু মিয়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ইমরান ও ইব্রাহিম ঝন্টু মিয়ার কাছ থেকে নিয়মিত মাদক কিনে সেবন করতেন। মাদক বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনার সূত্রপাত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য।

আরও পড়ুন
ইব্রাহিমির কাচে শুনিচি, ঝন্টু নাকি আমার ছেলের কাচে ৫০ ট্যাকা পাবে। সেই ট্যাকা না দিয়াই ফোন কইরে ডাইকে নিয়ে খুন করেচে।
মিনারুল ইসলাম, নিহত ইমরানের বাবা

ইমরান খুনের ঘটনায় তাঁর বাবা মিনারুল ইসলাম বাদী হয়ে ঝন্টু মিয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে আসামি করে গতকাল দুপুরে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। মিনারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইব্রাহিমির কাচে শুনিচি, ঝন্টু নাকি আমার ছেলের কাচে ৫০ ট্যাকা পাবে। সেই ট্যাকা না দিয়াই ফোন কইরে ডাইকে নিয়ে খুন করেচে। ঝন্টুর চাচা কালাচাঁদ আমাকে খবর দেয় যে ঝন্টু ও আমার ছেলে মারামারি করছে। গিয়ে দেখি, ধারালো দা দিয়ে আমার ছেলের বুকি আঘাত করা হয়েচে। সেকেনতি গলগল করে রক্ত বের হচ্চে। আমি আমার ছেলের খুনির বিচার চাই, ফাঁসি চাই।’

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ গনি মিয়া মামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। ইমরানের বন্ধু ইব্রাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অভিযুক্ত ঝন্টুকে ধরতে অভিযান চলছে।

আরও পড়ুন