চুয়াডাঙ্গায় আড্ডা ও উচ্ছ্বাসে মেতেছে পাঁচ শতাধিক কৃতী শিক্ষার্থী
টানা কয়েক দিনের রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির পর আজ শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। এমন পরিস্থিতির মধ্যে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে চুয়াডাঙ্গার ডিসি সাহিত্য মঞ্চসহ পুরো মিলনায়তন সরব হয়ে ওঠে।
এখানে আজ শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর আয়োজনে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছে। নাচ, গান, আড্ডা ও উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে জেলার পাঁচ শতাধিক কৃতী শিক্ষার্থী। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এর আগে কৃতী শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে আটটা থেকে উৎসব প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ তাদের মা–বাবার সঙ্গে, আবার কেউ কেউ ভাইবোনকে নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিন পর স্কুলজীবনের বন্ধু ও সহপাঠীদের কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল তারা। স্মৃতি ধরে রাখতে তোলে সেলফি ও ছবি।
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে জেলার ৪টি উপজেলা থেকে ৫৬৮ জন কৃতী শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। সকাল ৯টায় ডিসি সাহিত্য মঞ্চের পৃথক বুথ থেকে শিক্ষার্থীরা ক্রেস্ট ও স্ন্যাকস, সানকুইক জুস ও কাগজের তৈরি উৎসব মুকুট সংগ্রহ করে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে প্রত্যেকের হাতে পরিবেশবান্ধব গাছের চারা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে শান্ত আহমেদ, নুসরাত জাহান করবী, আরাফাত ফাগুন ও তাসনিম তাবাসসুম গান পরিবেশ করেন। অর্পিতা দাস ও সাবার নৃত্য পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় কৃতী শিক্ষার্থীরা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রথম আলো চুয়াডাঙ্গা বন্ধুসভার সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত জাহান করবী। প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম স্বাগত বক্তব্য দেন। অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য দেন দামুড়হুদা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গার সভাপতি জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক মার্টিন হীরক চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) সাইফুল ইসলাম ও প্রথম আলো কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান।
প্রথম আলো ও শিখোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য হয়েছিল একজন কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম আলোর সংবর্ধনা পাওয়ার। সেদিন আমি তোমাদের চেয়ারে বসে আজকের অবস্থানের স্বপ্ন দেখেছিলাম। যা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে।’
সহযোগী অধ্যাপক মুন্সী আবু সাইফ বলেন, জিপিএ-৫ পেয়ে আবেগে আপ্লুত না হয়ে সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো ফলাফল করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী লামিয়া তাসফিয়া বলে, ‘এই আয়োজন আমাদের সাফল্যের মর্যাদা দিয়েছে। যা সামনের দিনগুলোতে ভালো ফলাফল করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
কেদারগঞ্জ থেকে আসা অভিভাবক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বড়ই আফসোস যে আমাদের সময় কেউ এমন আয়োজন করেনি, উদ্যোগ নেয়নি, এমন অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেনি। তাহলে জীবনে আরও উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হতো।’
অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ বছর ১০ গুণী শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা পাওয়া গুণী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আলমডাঙ্গার ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জাকারিয়া হিরো বলেন, ‘শিক্ষাজীবন শেষ করে অনেকেই চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছ। তার আগে তোমাদের একজন ভালো মানুষ হতে হবে।’
সম্মাননা পাওয়া বাকি ৯ জন শিক্ষক হলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আরা চৌধুরী, ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জেসমিন আরা, দামুড়হুদা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাহমিদা আক্তার, চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূর হোসেন, এম এ বারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর হোসেন, ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুন্নাহার শিলা, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নুসরাত জাহান ও আল হেলাল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাকসুদা আহমেদ ও আলমডাঙ্গা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম।
‘স্বপ্ন দেখো, জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪ জেলায় প্রথম আলোর আয়োজন ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় এ বছরও শুরু হয়েছে জিপিএ-৫ উৎসব। আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় আছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।