হরতালে বড় শহর থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে না

বিএনপির ডাকা সকাল–সন্ধ্যা হরতালে আজ রোববার রংপুর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কামারপাড়া, রংপুর
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা আজ রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বড় শহরগুলো থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে না। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে কিছু বাস চলাচল করছে। বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর সংখ্যা বেশ কম।

খুলনা
সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস খুলনা থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে শহরের ভেতরে অল্পসংখ্যক বাস চলছে। আজ সকাল ৯টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত খুলনা নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। তবে শহরের ময়লাপোতা মোড়, সাতরাস্তা মোড়সহ কয়েকটি মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।

সকাল নয়টার দিকে সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সেখান থেকে কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোনো রুটের বাস চলছে না। তবে পাইকগাছা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও মোংলা রুটের বাস চলাচল করছে।

খুলনা থেকে কুষ্টিয়াগামী বাস কাউন্টারে বসে থাকা রেজাউল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, সকালে কুষ্টিয়া থেকে কোনো বাস খুলনায় আসেনি। খুলনা থেকে কোনো বাস যশোর ও কুষ্টিয়ার দিকে ছেড়ে যায়নি। সবার মধ্যেই বেশ আতঙ্ক। যাত্রীরা বের হচ্ছেন না। অবশ্য মালিকপক্ষ চাইছে সড়কে বাস চলুক। এত ঝুঁকি নিয়ে পরিবহনশ্রমিকেরা বাস চালাতে চাইছেন না।

পাশেই খুলনা-পাইকগাছাগামী বাসের কাউন্টার। কাউন্টারের সামনে পরিবহনশ্রমিকদের ভিড় থাকলেও ছিলেন না কোনো যাত্রী। কাউন্টারম্যান মো. আহাদ বলেন, বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে যাত্রী কম থাকায় আগে যেখানে ১৫ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যেত, সেখানে ২৫ মিনিট পরপর বাস যাচ্ছে। এরপরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে মোংলার উদ্দেশে একটি বাস ছেড়ে যায়। তাতে যাত্রী ছিলেন মাত্র তিনজন। ওই বাসের চালক মোহাম্মদ শাহিন বলেন, পরিবহনশ্রমিকেরা বাস না চালানোর পক্ষে। কিন্তু মালিকপক্ষের চাপে বাস চালাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। যাত্রী না থাকায় তেলের দাম যেমন উঠবে না, তেমনি সড়কের যে খরচ, তা–ও মিটবে না। শুধু শুধু কষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়।

রংপুর
সকালে রংপুর থেকে ঢাকাগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বাসস্ট্যান্ডে কাউন্টার খোলা থাকলেও যাত্রী নেই, তাই বাস ছাড়ছে না। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রংপুর নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে সকাল পৌনে ৭টায় কুড়িগ্রাম এবং সোয়া ৭টায় বুড়িমারী লোকাল ট্রেন রংপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে।

পরিবহনশ্রমিক ও মালিকেরা বলছেন, বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত আছে। এ কারণে ভোর থেকে কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু হরতালের কারণে যাত্রীসংকট। তাই বাস ছাড়া হচ্ছে না।

এদিকে সকালে কামারপাড়া ঢাকা কোচস্ট্যান্ডে সরেজমিন দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাস কাউন্টার খোলা থাকলেও যাত্রী নেই। টিকিটের জন্য নেই কারও কোনো তোড়জোড়। নাবিল পরিবহনের সুপারভাইজার মিজানুর রহমান বলেন, যাত্রীসংকটে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

সকাল থেকে এসআর পরিবহন, এনা পরিবহন, শাহ্ ফতেহ আলী, আগমনী পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার যাত্রীশূন্য দেখা গেছে। কিছু কিছু কাউন্টার ছিল তালাবদ্ধ। তবে বেশির ভাগ বাসশ্রমিক ও চালককে বাসে এবং কাউন্টারে শুয়ে-বসে সময় কাটাতে দেখা যায়।

একই চিত্র দেখা গেছে রংপুর কেন্দ্রীয় সিটি বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে আন্তজেলা রুটের কোনো বাস ছাড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীসংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। বাস টার্মিনালে অন্যান্য দিনের মতো যাত্রী চোখে পড়েনি।

আন্তজেলা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও শহরের প্রধান সড়কে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। অন্যান্য দিনের মতো যানবাহনের চাপ নেই। এতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের।

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, ‘আন্তজেলাসহ সব রুটেই গাড়ি চলাচল করবে। আমাদের পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধ করেনি। তবে যাত্রীসংকট আছে।’

রংপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, শহর ও মহাসড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।

সাভার (ঢাকা)

গাজীপুরে মাসখানেক আগে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন লীমা আক্তার (৩০)। মাগুরার পাল্লা গোয়ালখালী নিজ বাড়িতে ফিরবেন তিনি। সকাল ছয়টা থেকে বাসের জন্য বসে আছেন সাভারের নবীনগর বাস টার্মিনালে। তবে খোলা চারটি কাউন্টার থেকে তিনি টিকিট পাননি। টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা হরতালের কারণে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী না পাওয়ায় তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। যাত্রী পেলে টিকিট বিক্রি করা হবে বলে জানানো হয়েছে তাঁকে।

শুধু লীমা আক্তারই নন, এই বাস টার্মিনালে রোববার সকাল ১০টার দিকে ৮ থেকে ১০ জনকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। লীমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ছয়টায় আইসা বইসা আছি। কাউন্টারে গেলে বলে অপেক্ষা করতে। তারা বলছে, তিন-চারটার দিকে গাড়ি ছাড়তে পারে।’

সরেজমিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দেখা যায়, নবীনগর বাস কাউন্টারে খুলনা, বেনাপোল, বাগেরহাট, মাগুরা, গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গগামী বাসের ৩২টি কাউন্টারের মধ্যে মাত্র চারটি কাউন্টার খোলা আছে। অলস সময় পার করছেন এসব কাউন্টারের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। দু-একজন যাত্রী টিকিটের জন্য এলেও তাঁদের যাত্রীসংকটের কথা বলে অপেক্ষা করতে বলছেন কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা।

কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ৬টার পর থেকে ১০টা পর্যন্ত সাভারের নবীনগর থেকে দূরপাল্লার ৩২টি বাস কাউন্টারে প্রায় ৮০টি ব্যানারের শতাধিক বাস দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত একটি বাসও ঢাকা থেকে না আসায় এখান থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। তবে বেলা ১১টায় সাকুরা পরিবহনের একটি বাসকে নয়জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে দেখা যায়। বাসে মোট ১৮ থেকে ২০ জন যাত্রী দেখা যায়।

হানিফ এন্টারপ্রাইজে দায়িত্বরত মো. জিহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রী না থাকায় ঢাকা থেকে বাস আসছে না। বাধ্য হয়ে আমাদের এখানে এক-দুজন যাত্রী যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সমস্যাটি জানানোর পর তাঁরা চলে গেছেন।’

কাল ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে তৃতীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী শাহরিয়াত আবদুল্লাহর ভর্তির শেষ দিন। আশুলিয়ার জিরানি থেকে কাউন্টারটিতে এসেছিলেন টিকিট নিতে। আজই যাবেন তিনি। তবে টিকিট মেলেনি।

এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, সড়কে প্রতিদিনের তুলনায় যাত্রী পরিবহনের বাসসহ অন্যান্য পরিবহনের সংখ্যাও কম। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। অনেকে ইঞ্জিনচালিত রিকশা, লেগুনায় রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যের উদ্দেশে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নবীনগর এলাকায় মহাসড়কে পাথালিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য সফিউল আলাম সোহাগের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০টি মোটরসাইকেলে করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা যায়।

মানিকগঞ্জ

বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে মানিকগঞ্জে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আজ সকালে দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে অল্প কিছু লোকাল বাস চলাচল করেছে। যানবাহনসংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ বাসটার্মিনালে স্থানীয় শুভযাত্রা পরিবহনের ২০ থেকে ২৫টি বাস রাখা হয়েছে। ঢাকাগামী এসব বাসের জন্য যাত্রীদের কেউ কেউ সড়কে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যেতে অপেক্ষা করছেন।

শুভযাত্রা পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেন বলেন, এই পরিবহনের ৪০টির মতো বাস মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার গুলিস্তানে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। ভোর থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে তিনি দাবি করেন।

পাটুরিয়া ঘাট থেকে ঢাকাগামী সেলফি পরিবহনের কয়েকটি বাস চলাচল করতে দেখা গেলেও, তা খুবই সীমিত। এ পরিবহনের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজার জসিম উদ্দিন বলেন, এ পরিবহনের ১৮০টির মতো বাস চলাচল করে। প্রতি ১০ মিনিট পরপর পাটুরিয়া থেকে এসব বাস ছাড়লেও আজ আধা ঘণ্টা পরপর বাস ছাড়ছে। হরতালে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় মালিকদের অনেকেই বাস রাস্তায় নামাননি।

মানিকগঞ্জে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিদ্দিক সুপার মার্কেটের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রীকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অফিস-আদালত খোলার সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়ায় যাত্রীদের কেউ কেউ ঢাকায় যেতে সেখানে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ম্যাক্সি ও লোকাল বাসে করে ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য দিন থেকে আজ সড়কে যাত্রীও কম দেখা গেছে।

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবালয় গ্রামের মো. শরীফ (৪০)। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে সিদ্দিক সুপার মার্কেটের সামনে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কথা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরতাল চলছে, তবে কী করব! আমরা চাকরি করি। আমাদের অফিসে তো যেতেই হবে। আরিচা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাভ্যানে করে বাড়তি টাকা দিয়ে এখান (মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড) পর্যন্ত এসেছি।’

সিলেট

সিলেট থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। তবে আঞ্চলিক সড়কগুলোয় কিছু যানবাহন চলাচল করছে। নগরের ভেতরের সড়কগুলোয় যানবাহন চলাচল কম। কিছু রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।

এদিকে সিলেটে হরতালের শুরুতে পিকেটারদের ধাওয়া দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে জিন্দাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সিলেট নগরের জিন্দাবাজার মোড় ও কাজী ইলিয়াস এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পিকেটিং করছিলেন। এ সময় পুলিশের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে তাঁদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা ধাওয়া দিলে পিকেটাররা পালিয়ে যান।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় বিশৃঙ্খলা করছিলেন একদল হরতাল সমর্থনকারীরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা পালিয়েছেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

মৌলভীবাজার

ঢাকাসহ অন্য জেলার উদ্দেশে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল পৌনে সাতটার দিকে মৌলভীবাজার শহরতলীর চাঁদনীঘাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়ক দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করছে। বাসগুলো স্ট্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে কুলাউড়া, বড়লেখাসহ আন্তজেলার বিভিন্ন গন্তব্যের বাস ছেড়ে যায়। অন্যদিনের মতো বাস ছাড়ার কোনো তোড়জোড় নেই। পরিবহনশ্রমিক ও যাত্রী কাউকেই দেখা যায়নি।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শহরের মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল সড়কের কোদালীপুল এলাকায় ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসে যাত্রী ভেড়ানোর হাঁকডাক নেই। শ্যামলী পরিবহন, মামুন পরিবহন, রূপসী বাংলাসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ। শুধু হানিফ পরিবহনের কাউন্টারটি খোলা আছে। সড়কের এক পাশে হানিফ পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস দাঁড়িয়ে আছে।

এই বাসস্ট্যান্ডের পরিবহন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবহনশ্রমিকেরা জানালেন, এই বাসস্ট্যান্ডে সকাল ছয়টা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়ি ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। হানিফসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস এক ঘণ্টা পরপর ছাড়ে। রোববার সকালে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যাত্রীও তেমন নেই। কয়েকজন যাত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।

হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মো. রাসেল কাউন্টারের বাইরে অলস পায়চারী করছিলেন। দাঁড়িয়ে মুঠোফোন দেখছিলেন। এ রকম সময়ে তাঁর কাউন্টারে ব্যস্ত থাকার কথা। খোলা থাকলেও কাউন্টার ফাঁকা। মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল ছয়টা থেকে এক ঘণ্টা পরপর আমাদের বাস ছেড়ে যায়। অন্য কোনো বাসও ছাড়তে দেখছি না। সকালবেলা কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। যে দু-একটা বাস আসছে, এগুলো নাইটের। রাতে ছাড়ছে। এখন আইয়া পৌঁছতেছে।’

ফেনী

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে ফ্লাইওভার এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, মহাসড়কে দু-একটি ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। ফ্লাইওভারের নিচে কয়েকটি অটোরিকশা, রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কাউন্টারগুলো থেকে ঢাকাসহ দেশের কোথাও কোনো বাস ছাড়েনি। তবে জেলার কড্ডার মোড় এলাকা থেকে সকালে তিনটি বাস গাজীপুরের চন্দ্রার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল না করায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন।

সরেজমিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে প্রায় আধা ঘণ্টা পরপর মহাসড়কে উত্তরবঙ্গ থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত দু-একটি বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে শহরের প্রধান প্রধান সড়কসহ মহাসড়কে অনেক ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। মহাসড়কের কড্ডার মোড় এলাকায় ঢাকাগামী বাসের জন্য অসংখ্য যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পরপর উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা বাস এসে কড্ডার মোড় এলাকায় দাঁড়ালেই সেখানে যাত্রীরা ভিড় করছেন।

সিরাজগঞ্জ সদরের বেজগাতী গ্রামের পোশাককর্মী আসাদুল ইসলাম ঢাকার একটি কারখানায় কাজ করেন। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে এক দিনের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। আজ ঢাকায় যেতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘এমন হরতাল হবে আমার মাথায় ছিল না। এখন ঢাকায় যেতে বাস পাচ্ছি না।’

আরেক যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, হরতালের কারণে দু-একটি বাস ঢাকামুখী হলেও গাজীপুরের চন্দ্রার পর আর যাবে না। এর জন্য জনপ্রতি ভাড়া চাচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা ঢাকার ভাড়ার চেয়েও বেশি।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুল রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সে জন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। জেলার সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।