শেরপুরে প্রতিবাদের মুখে অবৈধ দখল থেকে রক্ষা পেল শিশুপার্কটি
বগুড়ার শেরপুরে স্থানীয় লোকজনের প্রতিবাদের মুখে পৌর শিশুপার্কটি অবৈধ দখল থেকে রক্ষা পেয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে পৌর প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে অবৈধ দখল কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেন ও ব্যানার পুড়িয়ে দেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর পৌর শহরের উত্তর সাহা পাড়ার চারমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পৌর শহরের উত্তর সাহা পাড়ার চারমাথা মোড়ে শিশুপার্কটির শহীদ মিনারের সামনে প্রতিদিন অস্থায়ীভাবে দুধের বাজার বসে। শেরপুর দই ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির ব্যানার টাঙিয়ে শিশুপার্কের চত্বরে এক মাস ধরে শিশুদের খেলাধুলার স্থান বালুমাটি ফেলে সেখানে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজনের প্রতিবাদের মুখে আজ ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছে।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শিশুপার্কের সীমানাদেয়ালে ঝোলানো হয়েছে শেরপুর দই ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির একাধিক ব্যানার। শিশুপার্কের নিমতলার পাশে সকাল থেকেই গোলাম রব্বানী নামের এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে দুজন শ্রমিক পার্কের মাঠে বালু ফেলে ভরাটের কাজ করছিলেন। সেখানে আলাপকালে গোলাম রব্বানী বলেন, তিনি শেরপুরের হোটেল সুপার সাউদিয়ার একজন কর্মচারী। তাঁদের হোটেলের মালিক আবদুল মোমিন মুন্সির নির্দেশে তিনি সমিতির ঘর নির্মাণের কাজ করছেন। তাঁকে ৪০০ বর্গফুট একটি টিনের ঘর নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। সেখানে ঘর নির্মাণ করার অনুমোদনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
হোটেল সুপার সাউদিয়ার ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুপার্ক চত্বরে দই ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির অফিস ঘর নির্মাণের জন্য তাঁরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন দেয়নি। এই সংবাদ তিনি আবদুল মোমিন মুন্সিকে জানিয়েছিলেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বসাক প্রথম আলোকে বলেন, শিশুপার্কের ভেতরে এই ঘর তোলার সঙ্গে সমিতির কোনো সম্পর্ক নেই। সভাপতি আবদুল মোমিন মুন্সি সমিতির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে এই কাজ করছেন।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে শিশুপার্ক চত্বরে নিমতলার পাশে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণের প্রতিবাদ করেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দা অরূপ সরকার বলেন, প্রায় এক মাস ধরে পৌরসভার পাশে শিশুপার্ক চত্বরে দই ও মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির ঘর নির্মাণ নিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ তা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে আজ স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করলে পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এসে অবৈধ দখল কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোবিন্দ কুমার বাগচী বলেন, পার্কের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা দখল হয়ে গেলে এলাকার শিশুরা আর খেলতে পারবে না। পৌরসভার এই জায়গা অবৈধভাবে দখল করা হচ্ছিল। পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
শেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুপার্ক চত্বরে কোনো অফিস ঘর নির্মাণ না করার জন্য আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানা হয়নি। আজ স্থানীয় লোকজন এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছেন। নিষেধ অমান্য করে অবৈধভাবে শিশুপার্কের মাঠ দখলের চেষ্টা করায় সমিতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
শিশুপার্ক চত্বরে অবৈধভাবে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক আশিক খান।