নারায়ণগঞ্জে আজ থেকে হকাররা বসছেন সলিমুল্লাহ সড়কে
নারায়ণগঞ্জ শহরের ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত ছেড়ে হকাররা আজ শুক্রবার থেকে নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে বসতে শুরু করেছেন। আজ ছুটির দিন বিধায় সড়কের দক্ষিণ পাশ পুরোটা জুড়ে হকাররা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। ওই সড়ক হকারদের দখলে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহনকে ঘুরে অন্য সড়ক দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
আজ দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে হকারদের বসার এই চিত্র দেখা গেছে। তবে সড়কজুড়ে হকারদের বসতে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। বৈঠকের পরদিন ফুটপাত থেকে হকারদের তুলে দেয় পুলিশ। ফুটপাত ফাঁকা থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেন নগরবাসী। কিন্তু হকাররা তাঁদের পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
হকারদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান হকার সমিতির নেতাদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করিয়ে তাঁদের বসার ব্যবস্থা করেন। অঙ্গীকারনামায় শর্ত থাকে, হকাররা বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসতে পারবেন না। তাঁরা কেবল সলিমুল্লাহ সড়কের ফুটপাতে বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। তবে রমজান মাসে শুক্র ও শনিবার সলিমুল্লাহ সড়কের একটি পাশ (সড়ক বিভাজকের দক্ষিণ পাশ) ‘হলিডে মার্কেট’ হিসেবে গণ্য হবে। এ দুই দিন সড়কের অর্ধেক খোলা রেখে বাকি অর্ধেকে হকাররা বসতে পারবেন। হলিডে মার্কেটের সুবিধা রমজান মাসের পর থাকবে না। তখন আবার সলিমুল্লাহ সড়কের ফুটপাতে বসতে হবে সবাইকে। এ ছাড়া অন্য কোনো সড়কে কোনো হকার বসতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধু সড়ক চাষাঢ়া থেকে মন্ডলপাড়া পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। সিটি করপোরেশন অস্থায়ী ভিত্তিতে বরাদ্দকৃত জায়গায় হকারদের আইডি কার্ড অনুযায়ী পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেবে। হকারদের কাছ থেকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রশাসন, পুলিশ কেউ চাঁদা ও অনুদান আদায় করতে পারবে না বলে অঙ্গীকার করেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। অঙ্গীকারনামায় তিনি ও হকার নেতা আবদুর রহিম মুন্সী স্বাক্ষর করেন।
রমজান মাস উপলক্ষে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হকাররা বন্ধের দুই দিন (শুক্র ও শনিবার) সলিমুল্লাহ সড়কের দক্ষিণ পাশে বসবেন। অন্যদিন তাঁরা ওই সড়কের ফুটপাতে বসবেন।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থক ও হকারদের হামলায় মেয়র আইভীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। দীর্ঘ আট বছর পর হকার সমস্যা সমাধানে সিটি মেয়র আইভী, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান একসঙ্গে সমাধানের উদ্যোগ নেন।
সরেজমিনে আজ দেখা গেছে, নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের দক্ষিণ পাশে খাজা সুপারমার্কেটের সামনে থেকে মিশনপাড়া স্বপ্ন সুপারশপ পর্যন্ত পুরো সড়ক হকারদের দখলে। হকাররা স্বপ্ন সুপারশপের সামনে কাঠের দুটি বেঞ্চ ফেলে সড়কের এক পাশ পুরোটা বন্ধ করে দিয়েছেন। পাঁচটি সারিতে হকাররা পণ্যের পসরা সাজিয়ে সড়কের ওপর বসেছেন। ভাসমান গাড়ির ওপরে দোকান, কাঠের চৌকি, বাঁশের টুকরি ও কাপড় বিছিয়ে সড়কের ওপর পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সেখানে ভিড় করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। তবে বঙ্গবন্ধু সড়কের জাকির সুপারমার্কেট, সাধু পৌলের গির্জাসহ বেশ কিছু স্থানে ফুটপাতে হকার বসতে দেখা গেছে।
এদিকে নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। প্রচুর মানুষের যাতায়াত এই সড়কে। কিন্তু সড়কটি হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এ সড়কের আশপাশে হাসপাতাল, খাবারের হোটেলসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হকারদের কারণে সড়কটিতে যানজট ও মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা।
নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে হকারদের বসতে জায়গা দেওয়া হলেও কতটা ব্যবসা করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন জুতা বিক্রেতা হকার সুমন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা না হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকা আমাদের কঠিন হয়ে পড়বে।’ কাপড় বিক্রেতা হকার কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এ সড়কে হকাররা বসতে শুরু করেছেন। এখনো বেচাকেনা জমেনি।
হকার নেতা আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, সলিমুল্লাহ সড়কে কোনো হকার আসতে চান না। এখনো অনেক হকার আসেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের হকারের সংখ্যা ৫ হাজার। সব হকারের এখানে জায়গা হবে না। জায়গা না হলে প্রশাসন তাঁদের পুনর্বাসন করবে।’
সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হকাররা বন্ধের দুই দিন (শুক্র ও শনিবার) সলিমুল্লাহ সড়কের দক্ষিণ পাশে বসবেন। অন্যদিন তাঁরা ফুটপাতে বসবেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর প্রথম আলোকে বলেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধের দুই দিন হকাররা ফুটপাত ছাড়াও সলিমুল্লাহ সড়কের একটি পাশের পুরোটা জুড়ে বসবেন। অন্যদিন তাঁরা ফুটপাতে বসবেন। তবে যাঁরা নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।