বগুড়ায় মোটরশ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার, আট ঘণ্টা পর ২২ রুটে বাস চলাচল শুরু

বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুপুর একটার পর থেকে শুরু হয় যানবাহন চলাচল। ছবিটি বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকা থেকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় তোলা
ছবি: প্রথম আলো

দুই নেতাকে মারধরে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে তিন দিনের সময় দিয়ে বগুড়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। এর ফলে বগুড়ার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার ২২টি রুটে বাস–মিনিবাস চলাচল শুরু হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্টেশন সড়কে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হামিদ (মিটুল) ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ (মিঠু) প্রশাসনকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।

আরও পড়ুন

শ্রমিক সমাবেশে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ বলেন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতাকে অন্যায়ভাবে হামলা করে আহত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শ্রমিকেরা সকাল থেকে ধর্মঘট পালন করেন। প্রশাসনের লোকজন ফোন করে বৈঠকে বসার কথা বললেও এখন পর্যন্ত সেই বৈঠকের বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেননি। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা খেটে খাওয়া শ্রমিক। ভবিষ্যতে কেউ যদি সেই শ্রমিকের একজনকেও লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন, তবে শুধু এক–দুটি দোকান নয়, সারা বাংলাদেশে আগুন জ্বলবে। শ্রমিকদের সেই সক্ষমতা আছে। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে আপত্তি নেই। তবে শ্রমিকদের ইজ্জত দিয়ে সমস্যার সমাধান হতে হবে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বগুড়ায় ব্যস্ত সড়কে অটোরিকশা দাঁড় করানো নিয়ে শহরের নারকেল আড়তদারদের সঙ্গে চালকদের বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার ওপর হামলা হয়। গতকাল ইফতারের আগে শহরের স্টেশন সড়কে মিতালী পাম্পের পাশে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত দুই শ্রমিক হলেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও সদস্য হযরত আলী।

শ্রমিক সমাবেশে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হামিদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘শ্রমিকদের কোনো বাহিনী দিয়ে দাবড়ানি দিতে হবে না। আমাদেরকে মারতে হবে না, ধরতেও হবে না। লাঠিপেটাও করতে হবে না। গাড়ির চাবি মালিককে দিয়ে আমরা ঘরে বসে থাকব। কেউ যদি মনে করেন, গাড়ি চালিয়ে সেবা দেবেন, তাতে আপত্তি নেই। কেউ যদি শ্রমিকের গায়ে হাত দেন, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। আলোচনার দরজা খোলা। আগামী তিন দিনের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় সব গাড়ি বন্ধ থাকবে।’

শ্রমিকনেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকাল থেকে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে শহরের স্টেশন সড়কে কয়েকটি নারকেল আড়তে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে আসেন। তখন বিক্ষুব্ধ মোটরশ্রমিকেরা স্টেশন সড়কে তাঁদের কার্যালয়ের সামনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তাঁদের সরিয়ে দেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নারকেলের আড়তের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার পর বেলা একটা থেকে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. সালেকুজ্জামান। একই তথ্য জানিয়েছেন বগুড়া বাস–মিনিবাস–কোচ পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তালুকদার।

এস আর ট্রাভেলস সাতমাথা কাউন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, বগুড়ার পরিবহনশ্রমিকেরা সকাল থেকে বগুড়া–ঢাকা রুট ছাড়া বগুড়া হয়ে দূরপাল্লার রুটের কোচ চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে সকাল থেকে কোচ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। বেলা একটা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার ওপর হামলার ঘটনায় রতন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।