৪ দিন বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনে বন বিভাগের টহল শুরু

সুন্দরবন সুরক্ষায় টহল দিচ্ছেন বন বিভাগের কর্মীরা। আজ শুক্রবার সকালে শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

চার দিন বন্ধ থাকার পর সুন্দরবন সুরক্ষায় টহল শুরু করেছেন বন বিভাগের কর্মীরা। আজ শুক্রবার সকাল থেকে তাঁরা এ কার্যক্রম শুরু করেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে গত সোমবার দুপুর থেকে টহল কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার কারণে সোমবার থেকে সুন্দরবনে বন বিভাগের টহল বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে তাঁদের একটি ফরেস্ট স্টেশন থেকে জব্দ করা নৌকা লুট করার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। সেখানে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বনরক্ষীদের যৌথ প্রচেষ্টায় দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে আগের মতো সুন্দরবন সুরক্ষায় টহল কার্যক্রম চালু করতে সব ফরেস্ট স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন সুরক্ষায় বন বিভাগের কর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, ছাত্র–ছাত্রীসহ আপামর জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজ সকালে সরেজমিনে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ি এলাকায় দেখা যায়, ইঞ্জিনচালিত নৌকার সামনে বন বিভাগ লেখা পতাকা টানিয়ে টহল দিচ্ছেন বনরক্ষীরা। সেখানে আলাপকালে টহল ফাঁড়িটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আতঙ্কে ছিলেন। সোমবার সেখানে কয়েকজনের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আজ থেকে আবার সুন্দরবন সুরক্ষায় টহলে ফিরেছেন তাঁরা।

সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েক দিন সুন্দরবনে বনরক্ষীদের টহল না থাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়ে সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা। এর ফলে হরিণশিকারি, বনের কাঠ লুটকারী চক্র ও বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনকারীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুন্দরবনে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

সুন্দরবন-সংলগ্ন ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন মানুষ মনে করেছে সুন্দরবন একেবারে উন্মুক্ত। যে যেভাবে পেরেছে, লুটপাট চালিয়েছে। মানুষ বিষ দিয়ে মাছ ধরে বস্তায় ভরে দিনের বেলায়ও লোকালয়ে নিয়ে এসেছে, যা আগে কখনো হয়নি। ২০০–২৫০ টাকা কেজিতে সুন্দরবনের মাছ বিক্রি হয়েছে। বন থেকে কাঠ কেটে নদীতে ভাসিয়ে লোকালয়ে এনেছে।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা ফরেস্ট স্টেশনে এসে বন বিভাগের সদস্যদের দায়িত্বপালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। আজ থেকে তাঁরা আবার সুন্দরবনে টহলে আছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁদের জনবল ও জলযানের সংকট আছে। এরপরও তাঁরা বনজ সম্পদ রক্ষায় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। তবে পুলিশিং কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় অপরাধীদের আদালতে সোপর্দ করা যাচ্ছে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কয়রা উপজেলার সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাতুল হাসান বলেন, সুন্দরবন হলো উপকূল রক্ষার ঢাল। এটা সুরক্ষিত রাখতেই হবে। বনরক্ষীরাও তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ থেকে কার্যক্রম শুরু করেছেন।