করোনার চতুর্থ টিকার কথা বলে যেভাবে ফাঁদে ফেলেন ‘ডাক্তার নাহিদ’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে বেলা আড়াইটার দিকে অচেনা নম্বর থেকে হঠাৎ কল আসে। ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘ডাক্তার নাহিদ’ বলে পরিচয় দেন। মুহূর্তের মধ্যে কথার ফাঁদে ফেলে তাঁর ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করেন ওই প্রতারক।
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফোন করে ওই প্রতারক তাঁকে করোনার চতুর্থ টিকা দিয়েছেন কি না, জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তখন তিনি উত্তর দেন, ‘না’। সঙ্গে সঙ্গেই অন্য একটি নম্বর থেকে তাঁর মুঠোফোনে কল আসে। তখন ওই প্রতারক বলেন, ‘আপনার এখানে একটা নম্বর থেকে কল গেছে। দয়া করে নম্বরটি বলুন। তাহলে আমরা চতুর্থ টিকার জন্য রেজিস্ট্রার করে রাখব। সময় মতো মেডিকেলে এসে দিয়ে যাবেন।’
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক বলেন, তখন তিনি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। যেহেতু চীনে নতুন ভাইরাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তিনিও বুঝে উঠতে পারেননি। করোনার চতুর্থ টিকার কথা তাঁর কাছে তখন বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল। তাই মুঠোফোনে আসা কল নম্বরটি তিনি বলে ফেলেছিলেন। পরেই তিনি হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েন। এরপর ওই প্রতারক তাঁর ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে বিভিন্ন পরিচিত মানুষকে খুদে বার্তা দিয়ে টাকা চাইতে থাকেন।
অবশ্য শুধু রেজিস্ট্রার নন। একই দিন একই কায়দায় হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন মজুমদার। তাঁরা দুজনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ ঘটনায় আলাউদ্দিন মজুমদারের পরিচিত কেউই ওই প্রতারককে টাকা না দিলেও অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পরিচিত একজন একটি বিকাশ নম্বরে ওই প্রতারককে টাকা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই প্রতারক অন্তত ৫০ জনের কাছে টাকা চেয়েছেন। কারও কাছে ১৫, কারও কাছে ৩০ হাজার টাকা চেয়ে খুদে বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে কেউ টাকা দেননি। সন্দেহ হওয়ায় মুঠোফোনে কল করে তাঁকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে তাঁর এক বন্ধু একটি বিকাশ নম্বরে তিন হাজার টাকা ওই প্রতারককে দিয়ে ফেলেছেন।
অধ্যাপক আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, তাঁর ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক হয়েছে। মুঠোফোনের গুগল অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত ছিল। তাঁর ধারণা প্রতারক চক্র ফেসবুকের মালিকানাধীন থাকা মাধ্যমগুলো হ্যাক করেছে। তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু কাওসার মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রতারণার বিষয়টি শুনেছেন। সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।