মাদারীপুরে শ্রমিক দলের কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যা

মাদারীপুর সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশিকে কুপিয়ে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন লোকজন। গতকাল রোববার রাতে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে শ্রমিক দলের একটি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের নতুন মাদারীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শাকিল মুনশি (৩৩) নতুন মাদারীপুর এলাকার মোফাজ্জেল মুনশির ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর পৌর শ্রমিক দলে লিটন হাওলাদারকে সভাপতি করে একটি কমিটি ঘোষণা করে জেলা কমিটি। এ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। জেলা কমিটির অনেক নেতা-কর্মী লিটনকে আওয়ামীপন্থী অভিযোগ করে পৌর শ্রমিক দলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ও কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

গতকাল দুপুরে শহরের একটি সড়কে অবস্থান নিয়ে পৌর শ্রমিক দলের কমিটি গঠন করায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। পৌর শ্রমিক দলের এই কমিটি নিয়ে লিটন হাওলাদারের সঙ্গে সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশির মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়।

পৌর কমিটি বাতিল করতে গতকাল রাতে শাকিল তাঁর কয়েকজন অনুসারী নিয়ে শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় একটি সভায় যাচ্ছিলেন। নতুন মাদারীপুর এলাকায় এলে শাকিলের ওপর হামলা চালান লিটন হাওলাদারের ভাতিজা আল আমিনসহ ১৫-২০ জন। এ সময় শাকিলকে দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শাকিলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কুপিয়ে আহত করা হয় আরও দুজনকে।

এদিকে শাকিলকে হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে দেশি অস্ত্র নিয়ে লিটনের অনুসারীদের সঙ্গে শাকিলের অনুসারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত শ্রমিক দলের নেতা শাকিলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহত শাকিলের ভাই রনজু মুনশি বলেন, ‘বিতর্কিত ব্যক্তি লিটন হাওলাদারকে মাদারীপুর পৌরসভা শ্রমিক দলের সভাপতি হিসেবে সম্প্রতি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করেছিল শাকিল। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন লিটন। পরে লিটন তাঁর ভাতিজা আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে এই হামলা চালান। এ সময় শাকিলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই, ওদের ফাঁসি চাই।’

লিটন হাওলাদার শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার মফেজ হাওলাদারের ছেলে ও লিটনের ভাতিজা আল আমিন হাওলাদার একই এলাকার আলমগীর হাওলাদারের ছেলে। ঘটনার পর থেকে দুজন পলাতক। অভিযোগের বিষয় জানতে লিটন ও আল-আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুজনের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।