বান্দরবানে ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে বান্দরবানে। জেলার হোটেল-মোটেলের কোথাও কক্ষ খালি নেই। দীর্ঘ কয়েক বছর পর পর্যটকের ভিড় বাড়ায় বেশ খুশি জেলার পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় থাকবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
পর্যটন–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় ঈদের পরদিন মঙ্গলবার থেকে পর্যটক সমাগম বাড়তে থাকে। গত বুধবার পর্যটকের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। অনেক পর্যটক হোটেল কক্ষ ভাড়া না পেয়ে মসজিদের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে রাত যাপন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও পর্যটকের বাড়তি চাপ দেখা গেছে।
গত বুধবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত কয়েক দফায় জেলা শহর ও শহরতলির বিভিন্ন পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবখানেই শত শত মানুষের ভিড়। কেউ পরিবার-পরিজন, কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। দূরদূরান্তের পর্যটক যেমন রয়েছেন, তেমনি এসেছেন আশপাশের এলাকার মানুষও। নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, শৈলপ্রপাতসহ প্রায় সব পর্যটনকেন্দ্রেই পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের ট্রাফিক মোড় এলাকায় কথা হয় যশোর থেকে বেড়াতে আসা শামসুল আলম নামের এক পর্যটকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁরা ১২ জনের একটি দল বুধবার পাহাড় দেখতে এসেছেন। হোটেলে অগ্রিম বুকিং দেননি। ভেবেছিলেন এসেই দরদাম করে হোটেলে উঠবেন। তবে বান্দরবানে এসে হোটেল না পেয়ে বুধবার রাতে একটি মসজিদের বারান্দায় ঘুমাতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের রাতযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ এলাকায় কথা হয় কুমিল্লা থেকে আসা তরুণ মনিরুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছয় বন্ধু একসঙ্গে বান্দরবানে এসেছেন। অনেক স্থানে ঘোরাঘুরি করেও হোটেলের কক্ষ ভাড়া পাননি। এ অবস্থায় রাতে ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
বুধবার দুপুরে শহরতলির শৈলপ্রপাতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ ছাদখোলা জিপ ভাড়া নিয়ে, কেউ আবার ব্যক্তিগত গাড়িতে ভিড় করেছেন পর্যটন স্পটটিতে। শৈলপ্রপাত এলাকায় ফলমূল এবং কোমরতাতে বোনা পোশাক বিক্রি করেন কিছু বম নারী। তাঁদের একজন সিয়ামপুই বম। পর্যটক বাড়ায় বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি। সিয়ামপুই বলেন, কয়েক বছর ধরে পর্যটক আসা কমে যাওয়ায় তাঁরা পুঁজি হারিয়েছেন। এখন পর্যটকের ঢল নামতে শুরু করেছে, তবে টাকার অভাবে মালামাল সংগ্রহ করতে পারছেন না।
এক থুরং (বেতের ঝুড়ি) ‘স্টার আপেল’ নিয়ে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করতে বসেছেন লালজিংময় বম। তিনি বলেন, ‘কিছু স্টার আপেল অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য এনেছি। ছোট আকারের সুগন্ধিযুক্ত সুমিষ্ট এসব ফল প্রতিটি ৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। টাকা থাকলে অন্য ফলও সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারতাম।’
চট্টগ্রাম থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে নয়জনের একটি দল এসেছে শৈলপ্রপাতে ঘুরতে। তাঁদের একজন মো. সাহাব বলেন, তাঁদের ইচ্ছা ছিল শৈলপ্রপাত দেখে রুমার বগা লেক অথবা থানচির নাফাখুম যাওয়া। তবে সেখানে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেবতাখুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বান্দরবান মাইক্রোবাস-জিপ-পিকআপ স্টেশনের লাইনম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, এবার ঈদের ছুটিতে এত পর্যটক এসেছেন যে তাঁরা অনেককে যানবাহন ভাড়া দিতে পারেননি। মানুষ বেশি যাচ্ছে রোয়াংছড়ির দেবতাখুমে।
জেলা হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বান্দরবানে নিরাপত্তা থাকায় পর্যটক বেড়েছে। আমরা আশা করছি শনিবার পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রুমা বন্ধ থাকলেও থানচি এলাকা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া দরকার। তাহলে মানুষ আরও বেশি বান্দরবানে আসতে আগ্রহী হবে।’
জেলায় কর্মরত ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘হাজার হাজার পর্যটকের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তাঁদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন। ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বান্দরবানে নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে কোনো সমস্যা নেই।’