ইউএনও–ওসির দ্বন্দ্বে ভেস্তে গেল অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠান

ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্থানীয় সংসদ সদস্য নিয়ে অস্ত্র সমর্পন অনুষ্ঠানের আয়োজনে করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে একটি অস্ত্রও জমা না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর–২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করে দেশি অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে একটি অস্ত্রও জমা পড়েনি। এ কারণে সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আজ শনিবার বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পুড়াপাড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকান্দা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি একটি ঘটনা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মধ্যে বিরোধ চলায় দেশি অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠান সফল হয়নি। তবে এ বিষয়ে ইউএনও ও ওসি কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউএনও মো. মঈনুল হক। সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন ও পুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বেলা সাড়ে তিনটায় ওই অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে। ওই অনুষ্ঠানে আনুমানিক শতাধিক ব্যক্তি ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে কোনো ব্যক্তিকে অস্ত্র জমা দিতে দেখা যায়নি।

অস্ত্র জমা দেওয়ার অনুষ্ঠানে একটি অস্ত্রও জমা না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি এই এলাকার সংসদ সদস্য। আমার নির্দেশ আপনাদের মেনে চলতে হবে। এ এলাকা চলবে আমার নির্দেশে। আমার নির্দেশের বাইরে এ এলাকায় কিছু চলবে না।’

শাহদাব আকবর আরও বলেন, ‘আমি কোনো অস্ত্রধারীকে প্রশ্রয় দিই না। যাঁরা অস্ত্র ব্যবহার করেন, যাঁরা তাঁদের প্রশ্রয় দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সামাজিক দায় মনে করে অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। আজ আপনারা সবাই ব্যর্থ, প্রত্যেকেই ব্যর্থ।’

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত নগরকান্দা থানা–পুলিশ পুরপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে ২৮টি ঢাল, ২০টি কাতরা (টেঁটাজাতীয় দেশি অস্ত্র) ও দুটি রামদা উদ্ধার করে। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০–১৫ জনকে আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নগরকান্দার ইউএনও ও থানার ওসির মধ্যে একটি স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কোনো অস্ত্র জমা পড়েনি। উপজেলা প্রশাসন অস্ত্র সমর্পণের উদ্যোগ নেওয়ার পর আজ রাতে পুলিশ গ্রামবাসীর কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে। ওই সময় পুলিশ গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে আরও অস্ত্র আছে কি না জানতে চাইলে তাঁরা নেই বলে জানান। এ কারণে আজ অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে গ্রামের কারা অস্ত্র জমা দিতে আসেন, তা দেখার জন্য পুলিশ ওই অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশের এলাকায় জড়ো হয়। এ কারণে কোনো ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে সভাস্থলে আসেনি।

অস্ত্র সমর্পণের অনুষ্ঠানে কোনো অস্ত্র জমা না পড়ার বিষয়ে নগরকান্দা থানার ওসি মিরাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওটা তো উপজেলা প্রশাসন আয়োজন করেছিল। সংসদ সদস্য থাকবেন, এ কথা জেনে আমি ওই সভায় যোগ দিই।’

এ বিষয়ে ইউএনও মো. মঈনুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে কী ঘটেছে, তা আপনারা সাংবাদিকেরা অনুসন্ধান করে বের করতে পারেন। ওসির বক্তব্যের বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে বিব্রত বোধ করছি।’