‘উল্কা হঠাৎ করে জ্বলে উঠে আবারও নিভে যায়। কিন্তু নক্ষত্র সারাক্ষণ জ্বলতে থাকে। তোমাদের উল্কার মতো হঠাৎ জ্বলে উঠে আবার নিভে গেলে হবে না; নক্ষত্রের মতো সারাক্ষণ জ্বলতে হবে। ট্রেনের বগি না হয়ে তোমাদের ইঞ্জিনের মতো হতে হবে। পুরো ট্রেনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তোমাদের।’
আজ সকালে ময়মনসিংহে সংবর্ধনা নিতে আসা জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার। শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো।
প্রচণ্ড রোদ আর গরমকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা আজ সকাল থেকেই বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আসতে থাকে। শুরুতেই নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাকসসহ উপহারসামগ্রী গ্রহণ করে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা। এরপর দলে দলে ভাগ হয়ে আড্ডা ও সেলফি তোলায় মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করে।
সকাল ঠিক ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আয়োজন। পরে স্বগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি কামরান পারভেজ। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের পাঠানো লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মঞ্চে উঠে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে।
বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোদশী আলম বলেন, ‘মা বলেন, “আগে ভালো মানুষ হতে হবে।” আমার আমার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়া। মায়ের আর আমার ইচ্ছা পূরণ করতে হলে আমাদের ভালো মানুষ ও ভালো ডাক্তার হতে হবে।’ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে আসা শিক্ষার্থী তাসনিয়া মেহজাবিন বলেন, ‘আজকের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে খুব ভালো লাগছে। এ সংবর্ধনা আমাদের জন্য খুবই উৎসাহ জোগাবে।’
আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য আর ফাঁকে ফাঁকে নাচগান চলে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইডিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননাপ্রাপ্ত ময়মনসিংহের শিক্ষক তাপস মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা চাই তোমাদের মানুষ বানাতে। কিন্তু তোমাদের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের একার মধ্যে সেটা সম্ভব নয়। শাসন করে নয়, ভালোবেসে আমরা তোমাদের ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে চাই।’
প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রথম আলোর সম্পাদক বলেন, “আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।” তোমাদের হাত ধরেই আসবে বাংলাদেশের জয়। তোমাদের ভালো মানুষ ও এবং সফল মানুষ হিসেবে দেখতে চাই।’ ফিরোজ চৌধুরীর সঙ্গে শিক্ষার্থীরা মাদককে ‘না’ বলে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মণ্ডল ও ফারিয়া আফরিন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। লোকগান পরিবেশন করেন শিল্পী আশিক। আধুনিক ও ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফি তালুকদার ও চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠের প্রতিযোগিতায় থাকা তরুণ গায়ক শুভ।
দেশের ৬৪টি জেলায় পর্যায়ক্রমে জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। ময়মনসিংহে এই উৎসবে অংশ নেয় প্রায় তিন হাজার কৃতী শিক্ষার্থী।
দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস বক্স।