চট্টগ্রামে এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৬৪ শতাংশই ছিলেন নগরের বাসিন্দা। মৃত্যুর ঘটনাও নগরে বেশি। মোট ৪৫ জনের মধ্যে নগরে মারা গেছে ২৫ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যু আগের বছরের চেয়ে কম ছিল। তবে বছরব্যাপী এই রোগ আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩১৮ জন। আগের বছর এটা ছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। ওই বছর মোট মারা গিয়েছিলেন ১০৭ জন। এবার তা কমে ৪৫ জনে ঠেকেছে।
তবে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির যে তথ্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া হয় সেটা শতভাগ সঠিক নয়। অনেক হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্র নিয়মিত ডেঙ্গুর তথ্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সরবরাহ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নগরে এ বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭৪০ জন। এ সময় বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৭৭ জন। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭৫ জন ভর্তি হয় সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে।
সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার পর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত কমে গেছে। এই মাসগুলোতে এডিস মশার বিস্তারও কম থাকে। সে কারণে ডেঙ্গু এখন কমে এসেছে। তবে ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে থেমে থেমে বৃষ্টির সময় ডেঙ্গু বেশি হয়। আগামী বছর যাতে ডেঙ্গু আরও কমে আসে, সেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
মহানগরে আক্রান্ত বেশি
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নগরে এ বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭৪০ জন। এ সময় বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৭৭ জন। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭৫ জন ভর্তি হয় সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে।
সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে অক্টোবর মাসে ১ হাজার ৪৩০ জন। ওই মাসে মারা গেছেন ১১ জন। সবচেয়ে বেশি ১৬ জন মারা গেছেন নভেম্বর মাসে। তবে ওই মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ছিলেন ১ হাজার ২৮ জন। সবচেয়ে কম ১৭ জন আক্রান্ত হন মে মাসে।
চিকিৎসকদের মতে, পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হলো বেশি সময় ধরে ঘরের বাইরে অবস্থান করা। এ ছাড়া নারীরা জ্বরে আক্রান্ত হলেও তা নিয়ে উদাসীন থাকেন। ফলে দেরিতে হাসপাতালে ভর্তির কারণে তাঁদের মৃত্যু বেশি হয় বলে জানান সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম।
মৃত্যুতে এগিয়ে নারী
পুরুষ আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যুতে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা। মারা যাওয়া মোট ৪৫ জনের মধ্যে ২৪ জন নারী। এটি মোট মৃত্যুর ৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া শিশু মারা গেছে ৫ জন।
এ বছর মোট আক্রান্তের মধ্যে পুরুষ ছিল ২ হাজার ২৮৫ জন। নারী ছিলেন ১ হাজার ২৪০ জন। শিশু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭৯২ জন।
জানুয়ারি মাসে প্রথম মারা যান দুই ব্যক্তি। ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, মে ও জুন মাস ছাড়া প্রতি মাসে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। পুরুষের তুলনায় নারীর মৃত্যু বেশি হওয়ার পেছনে রোগ লুকিয়ে রাখা এবং অবহেলা করার বিষয়টিকে দায়ী করেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের মতে, পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হলো বেশি সময় ধরে ঘরের বাইরে অবস্থান করা। এ ছাড়া নারীরা জ্বরে আক্রান্ত হলেও তা নিয়ে উদাসীন থাকেন। ফলে দেরিতে হাসপাতালে ভর্তির কারণে তাঁদের মৃত্যু বেশি হয় বলে জানান সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগামী বছরের জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে মৃত্যু এবং আক্রান্ত আরও কমে আসে। বর্ষার আগে থেকেই আমরা এবং করপোরেশন প্রস্তুতি নেব।’