গণমাধ্যমকর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে দুর্নীতি ঢুকে পড়বে: কামাল আহমেদ
গণমাধ্যমে কর্মরতদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে দুর্নীতি ঢুকে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, মফস্সলে অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়। খরচ দেওয়া হয় না। আয়-রোজগারের নিশ্চয়তা দেওয়া না হলে দুর্নীতি কমবে না। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা তখনই আসবে, যখন তাঁর প্রতিষ্ঠান নিজের টেকসই আর্থিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারবে।
আজ রোববার দুপুরে সিলেট নগরের বালুচর এলাকার জেলা শিল্পকলা একাডেমির হল রুমে সিলেট বিভাগের সাংবাদিকদের সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্কার কমিশনের সদস্য শামসুল হক জাহিদ, বেগম কামরুন নেসা হাসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন।
কামাল আহমেদ বলেন, মিডিয়া লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে, ডিএফপিতে ঘটছে। ডিএফপির দুর্নীতির সঙ্গে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠান, অনেক সাংবাদিক নেতাও জড়িত। ডিএফপির ক্ষেত্রে যে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়, পত্রিকা ওয়েজ বোর্ড দিচ্ছে কি দিচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে সাংবাদিক নেতা এবং একজন সম্পাদকের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। পুরো বিষয়টিতে একধরনের অসততার আশ্রয় নেওয়া হয়, দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়, সেই ক্ষেত্রে শুধু সরকারি কর্মকর্তারা দায়ী নন। সরকারি কর্মকর্তার পাশাপাশি যাঁর স্বাক্ষর রয়েছে, তাঁরাও কম দায়ী নন। তাঁদেরও এ দায় নিতে হবে।
দেশে ৫৯২-৫৯৪ পত্রিকা মিডিয়া তালিকাভুক্ত জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ঢাকায় সংবাদপত্র বিতরণকারীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিদিনের হিসাবে ৪৬টি দৈনিক পত্রিকা তাঁরা বিলি করেন। এর মানে বাকি কাগজগুলোর গ্রাহক কিংবা পাঠক নেই। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার তালিকা লম্বা হয়ে গেছে; যাতে ৫৯২-৫৯৪ হয়ে গেছে। এসব জালিয়াতি বন্ধের পথ খুঁজতে হবে।
টেলিভিশনের সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, ‘তাদের অভিযোগ তাদের কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। পত্রিকার জন্য আছে, কিন্তু তাদের নেই। টেলিভিশন শিল্পে যেসব সাংবাদিক কাজ করছেন, তাঁদের জন্য অভিন্ন বেতনকাঠামো থাকা দরকার। অন্তত ন্যূনতম বেতনকাঠামো থাকা দরকার। যার নিচে কোনো সাংবাদিকের ডিসেন্ট জীবন যাপন সম্ভব নয়। সেটা কমিশনের দায়িত্ব নয়। হয়তো সে কাঠামোর কথা কমিশনের পক্ষ থেকে বলতে পারব না। সেটা অর্থনীতিবিদেরা ঠিক করবেন। তবে আমরা বলতে পারি, অবশ্যই ন্যূনতম একটা বেতনকাঠামোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের গণমাধ্যম থেকে নিষিদ্ধ করার কথা প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘এ দাবিতে এত দিন কেউ সোচ্চার হয়নি। আগামীকাল টেলিভিশন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা ছিল। সে জন্য টেলিভিশন মালিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে লাইসেন্সধারী সব সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে যাঁরা লাইসেন্সের মালিক, তাঁরা আগের সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ। এতে প্রশ্ন উঠেছে, আমরা ফ্যাসিস্টদের মুখপাত্রদের সঙ্গে বৈঠক করছি কি না। কিন্তু গত ছয় মাসে এসব কোনো চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিল হয়নি।’