নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর পরও খেজুরের রসের ব্যাপারে সচেতনতা কম
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় গত ৩০ জানুয়ারি নিপাহ ভাইরাসে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরও নাটোরে দেদার খেজুরের রস বিক্রি চলছে। রস পান না করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা গেছে।
নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে, বিশেষ করে বাদুড় ও শূকর থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে। আক্রান্ত বাদুড় কোনো ফল খেলে বা খেজুরের রস পান করলে এটির লালা, প্রস্রাব বা অন্যান্য বর্জ্য দিয়ে সরাসরি সেই ফল বা খেজুরের রস দূষিত হয়। কোনো মানুষ যদি সেই ফল খায় বা খেজুরের রস পান করে, তাহলে তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই, টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। তবে নাটোরের বিভিন্ন সড়কের পাশে ও গ্রামের হাটবাজারে প্রকাশ্যে খেজুরের কাঁচারস বেচাকেনা চলছে। বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কের পাশে রসপানের আহ্বান জানিয়ে ব্যানার ঝুলিয়েও রস বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে অন্তত তিনটি স্থানে একমাস ধরে খেজুরের কাঁচা রস বেচাকেনা চলছে। সড়কে যানবাহন থামিয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ কাঁচারস পান করছেন। বিশেষ করে, শ্রমজীবী মানুষ এই রসের মূল ক্রেতা।
আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টার দিকে বড়াইগ্রামের মহিষভাঙ্গা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের উত্তর পাশে তিনটি স্থানে খেজুরের কাঁচারস বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা রাস্তার পাশে মাটির হাড়িভর্তি রস নিয়ে বসে আছেন। প্রতি গ্লাস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। কেউ কেউ রসের সঙ্গে মুড়ি ভিজিয়ে খাচ্ছেন। রস বিক্রেতার কাছেই মুড়ি পাওয়া যাচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম নামের এক রসবিক্রেতা খেজুরের খাঁটি রস ও গুড় বিক্রির বিজ্ঞাপন সংবলিত ব্যানার ঝুলিয়ে রেখেছেন। সেখানে বিক্রেতার মুঠোফোন নম্বরও উল্লেখ করা আছে। শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে রস কিনে পান করছিলেন গাজীপুরের পিকআপ ভ্যানের চালক মাসুদ রানা (২৮)। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বছর একবারও খাইনি। আমার এলাকায় খেঁজুরের গাছ নাই। তাই হাতের কাছে পেয়ে এক গ্লাস খাইছি।’
জানতে চাইলে বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোগডার কথা শুনছি। তবে আমার রস খাইলে ওই রোগ হবি না।’ কাঁচারস বিক্রির ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘কই কেউ তো বলেনি।’
সেখান থেকে পশ্চিম দিকে আরও দুই কিলোমিটার গিয়ে আজিজুর রহমান নামের এক যুবককে খেজুরের রস বিক্রি করতে দেখা গেল। তিনি এই প্রতিবেদককে দেখে রসের পাত্র ফেলে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। পরে তিনি কথা বলতে রাজি হন। আজিজুরের ভাষ্য, তিনি নিপাহ ভাইরাসের ব্যাপারে জেনেই এই ব্যবসা করছেন। এটা মৌসুমী ব্যবসা।
নাটোরের সিভিল সার্জন রোজি আরা খাতুন বলেন, নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শীতের শুরু থেকেই ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে কাঁচারস পান করার ব্যাপারে সবাইকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এই রোগের চিকিৎসা না থাকায় এর ঝুঁকিও বেশি। তাই নিজেদের রক্ষার ব্যাপারে ‘খেজুরের কাঁচা রস খাবো না’—সবাইকে এই অঙ্গীকার করতে হবে।
৩০ জানুয়ারি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার করমদোশী গ্রামের স্কুলছাত্র সিয়াম হোসেন (১২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এর আগে ১৭ জানুয়ারি সিয়াম বাগাতিপাড়ায় নানার বাড়িতে গিয়ে খেজুরের কাঁচারস পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।