রাজশাহীতে বিএনপির এক পক্ষের বিরুদ্ধে ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগ আরেক পক্ষের

ভিজিএফের চাল
প্রথম আলো ফাইল ছবি

এবার রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভায় বিএনপির এক পক্ষ নিজ দলের আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্তত ৫০০ জনের ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ তুলেছে। আজ মঙ্গলবার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অনেকেই এসে অভিযোগ তোলেন যে তাঁদের নামে পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে কার্ড দেওয়া হলেও চাল দেওয়া হচ্ছে না। চাল নিতে গেলে তাঁদের জানানো হচ্ছে, এই কার্ডের চাল আগের দিনই বিতরণ হয়ে গেছে। এ সময় তাঁরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদ উপলক্ষে ৪ হাজার ৬২১ জনের জন্য মাথাপিছু ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ আসে। পৌরসভার একজন কর্মকর্তার কাছে থাকা তালিকায় দেখা যায়, পৌরসভা ৬০৮ জনের বরাদ্দ নিজেরা বিতরণের জন্য রেখেছে। আর জামায়াতে ইসলামীর নামে ৮৪৫টি, পৌর বিএনপির নামে ২ হাজার ৮৩১টি এবং ছাত্রদের অনুকূলে ৩৩৭টি কার্ড রাখা হয়। তবে পৌর বিএনপিই ছাত্রদের নামে থাকা কার্ডগুলোও নেয়। অর্থাৎ পৌর বিএনপি মোট ৩ হাজার ১৬৮টি কার্ড বিতরণের দায়িত্ব পায়।

পৌরসভার বাঘাটা মহল্লার বাসিন্দা কামাল আলী বলেন, ‘গত রাত ৯টায় আমার বাবা শামসুল ইসলামের নামে কার্ড দেওয়া হয়েছে। এখন চাল নিতে এলে বলছে, এই চাল গতকাল দুপুরের আগেই বিতরণ হয়ে গেছে। এই চাল কে তুলে নিয়েছে, সেটা আমি জানি না।’

মহানন্দখালী মহল্লার বাসিন্দা এবাদত উল্লাহ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাইল থাইকা আমি ঘুরছি। আমার চাইল বেইচে খায়্যা লিয়েছে। আপনারা বিচার করেন, কইরে আমাক চাইলড্যা বাহির কইরে দেন। আমি গরিব মানুষ, আমার চাইলড্যাও বেইচে খাওয়া লাগবি ক্যান?’

এদিকে অনেকেই চাল পাচ্ছেন না দেখে পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীনসহ তাঁর অনুসারীরা অভিযোগ তোলেন, চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের পক্ষে তাঁর কর্মী মো. রক্সি চাল বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন। রক্সি চাল সরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিএনপির জয়নালের পক্ষের লোকজন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপির কর্মী রক্সিকে মারধরও করা হয়। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন রক্সি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রক্সিকেই চাল বিতরণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক। রক্সি ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষের চাল আত্মসাৎ করেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের এসব মানুষ চাল পায়নি। রক্সি বেচে খেয়েছে।’

এ সময় জয়নাল আবেদীন একটি কাগজে একটি ‘স্বীকারোক্তি’ লেখা দেখান। এতে থাকা স্বাক্ষরটি রক্সির বলে তিনি দাবি করেন। ওই কাগজে লেখা আছে, ‘আমি ভিজিএফের চাল বিতরণের দায়িত্বে ছিলাম। ভুলক্রমে ১ নম্বর ওয়ার্ডের চাল বিতরণে অনিয়ম হয়। এই দায় সম্পূর্ণ আমার। তাই চাল না পাওয়া ব্যক্তিদের রোষানলে পড়ি এবং আঘাতপ্রাপ্ত হই। পৌরসভার হাবিব ভাইয়ের অফিসে ভুল স্বীকার করে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সব চাল দেওয়ার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে স্বীকারোক্তি দিচ্ছি।’ এই কাগজটিতে সাক্ষী হিসেবে দুজন নারীর স্বাক্ষরও আছে। জয়নালের দাবি, অন্তত ২০ জনের সামনে রক্সি এতে সই করেছেন।

তবে এমন কোনো স্বীকারোক্তি দেননি বলে দাবি করেছেন বিএনপির কর্মী রক্সি। তিনি বলেন, ‘জয়নাল আবেদীন ও তাঁর লোকজন আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চাল আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মারধর করেছেন। আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি, থানায় মামলা করব। এ জন্য এই কাগজ জয়নাল আবেদীন নিজেই বানিয়েছেন। স্বাক্ষর আমার না।’

চাল আত্মসাতের অভিযোগ নাকচ করে পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছিল। আমাদের ৩ হাজার ১৬৮টি কার্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি তালিকা দিয়েছিলাম ৩ হাজার ২০০ জনের। ৩২ জনের তালিকা বেশি দেওয়ায় পৌরসভা থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, পৌরসভার জন্য যে ৬০৮টি কার্ড আছে, সেখান থেকে অথবা সব ওয়ার্ড থেকে কয়েকটা করে কার্ড কমিয়ে যেন এই ৩২ জনকে চাল দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁরা সেটি করেননি। ফলে এই ৩২ জন চাল পায়নি। আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক না। এই ৩২ জনকে আমি নিজের পকেট থেকে চাল কিনে দেব।’

এদিকে নওহাটা পৌরসভার প্রশাসক ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বিএনপিকে ভিজিএফের কোনো কার্ডই দেওয়া হয়নি দাবি করে বলেন, ‘বিএনপিকে চাল বিতরণের কোনো কার্ড দেওয়া হয়নি। তাঁরা নিজেরাই এক গ্রুপের বিরুদ্ধে ভিজিএফের কার্ড বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ করছে। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আমার কাছে এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। শুনলাম, তাঁরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। কিন্তু আমার চাল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আমাদের কাছে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনা রয়েছে, ঈদের আগেই যেন দুস্থ মানুষগুলো চাল পায়। সে বিষয়টা আমরা যথাযথভাবে তদারক করছি।’