‘এক ঘণ্টার বাজারে’ বিক্রি হয় ৩০-৩৫ হাজার লিটার দুধ
কৃষক কমর উদ্দিনের (৬৫) বাড়িতে গাভি আছে দুটি। এগুলো থেকে অন্তত আট সের দুধ পাওয়া যায়। আর এসব দুধ তিনি বিক্রি করেন ‘এক ঘণ্টার দুধের বাজারে’। এভাবে প্রায় চার বছর ধরে তিনি এ বাজারে নিয়মিত দুধ বিক্রি করে আসছেন। তাঁর মতো দুই শতাধিক কৃষক বা খামারি এ বাজারে নিয়মিত দুধ বিক্রি করেন।
এক ঘণ্টার এই বিশেষ দুধ বাজারটি বসে বগুড়ার শেরপুর পৌর উত্তর সাহাপাড়া মহল্লায় শিশুপার্ক চত্বরে। প্রায় চার বছর ধরে সেখানে দুধের বাজার বসানো হচ্ছে। এর আগে বাজারটি ছিল শহরের সান্যালপাড়া সড়কের ওপর। পরে বাজারটিকে শিশুপার্ক চত্বরে আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার ওই বাজারে গিয়ে জানা যায়, শেরপুর পৌরসভার অধীন দুধের বাজারটির ইজারা পেয়েছেন রায়হান রহমান। তিনি বাজারটির বিশেষত্বের কথা জানিয়ে বলেন, এটি মূলত এক ঘণ্টার বাজার। এই সময়ের মধ্যে বাজারে ৩০-৩৫ হাজার লিটার দুধ কেনাবেচা হয়। শেরপুর উপজেলার পাশাপাশি বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার অন্তত ৩ শতাধিক দই ও মিষ্টি ব্যবসায়ী এই বাজারে নিয়মিত দুধ কিনতে আসেন। সেখানে প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ দুধ বিক্রি হয়। অবশিষ্ট ৫ ভাগ দুধ বিক্রি চলে বেলা একটা পর্যন্ত।
শেরপুর উপজেলার কুসুম্বি, গাড়িদহ, খামারকান্দি, খানপুর, মির্জাপুর, শাহবন্দেগী ইউনিয়নের অন্তত ২০০টি গ্রামের কয়েক শ কৃষকের গাভির দুধ বিক্রির জন্য এ বাজারে যান। এ ছাড়া গরুর খামারিরাও এ বাজারে দুধ বিক্রি করেন। কেউ কেউ মালিক বা খামারির কাছে দুধ কিনে সেখানে বিক্রি করেন। তাঁদের একজন উপজেলার খানপুরের মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, এই দুধের বাজার কেন্দ্র করেই তাঁর ব্যবসা। সেখানে আসা খামারিদের কাছ থেকে এক-দেড় মণ দুধ কেনেন প্রতিদিন। পরে এসব খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে তাঁর প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এক ঘণ্টার এই দুধের বাজারে দ্রুতই এসব দুধ বিক্রি হয়। তিনি শুধু একা নন, এমন আরও অর্ধশত ব্যক্তি সেখান থেকে দুধ কিনে একই বাজারে বিক্রি করেন। এতে তাঁদের প্রত্যেকের সংসারের ব্যয় মিটছে।
একেকটি ভ্যানে তিন থেকে চারটি করে সিলভারের পাতিল ভরে বিক্রির জন্য দুধ বাজারে তোলা হচ্ছিল। প্রতিটি ভ্যানে আছে দেড় থেকে তিন মণ দুধ। বাজারে এমন ভ্যানের সংখ্যা শতাধিক। এসব ভ্যানে বাজারে দুধ বিক্রি করতে আসেন উপজেলার শালফা গ্রামের মো. সুলতান ও তোজাম উদ্দিন, গজারিয়ার মো. মিঠু, নলবাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফ। তাঁরা বলেন, প্রতিদিন তাঁরা ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে আয় করেন।
মঙ্গলবার বাজারটিতে প্রতি কেজি দুধ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে। সেখান থেকে শুধু দই ও মিষ্টি তৈরির কারখানার জন্যই দুধ কেনা হয় না। শেরপুর শহরের ৩০০-৪০০ পরিবার নিয়মিতভাবে দুধ কেনেন।
শেরপুর শহরে দই ও মিষ্টি উৎপাদনকারীদের একজন মোহাম্মদ মিঠু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শেরপুর উপজেলায় আড়াই থেকে তিন শতাধিক দই ও মিষ্টি উৎপাদনকারী কারখানা আছে। স্থানীয় এই বাজার থেকে তাঁরা দুধ কিনে থাকেন। শেরপুরের চাহিদার পাশাপাশি পাশের শাহজাহানপুর, বগুড়া সদর ও নন্দীগ্রাম উপজেলা থেকেও অনেক কারখানামালিক বাজারটি থেকে দুধ কিনে থাকেন। প্রতিদিন দুধ কেনার জন্য তাঁরা বাজার শুরুর অন্তত ২০ মিনিট আগে সেখানে আসেন।
এক ঘণ্টার এই দুধের বাজারের বিষয়ে শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিয়াজ কাজমীর প্রথম আলোকে বলেন, এক ঘণ্টার এই দুধের বাজারটির ব্যাপক পরিচিতি আছে। উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ৭ হাজার ২৫০টি দুগ্ধখামার আছে। শেরপুরে প্রতিদিন উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার লিটার দুধ। আর ওই দুধের বাজারে বিক্রির জন্য উঠে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লিটার। এ ছাড়া শেরপুরের দুধ আশপাশের উপজেলাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় যায়।
নিয়াজ কাজমীর আরও জানান, শেরপুরে দই ও মিষ্টি তৈরির কয়েক শ কারখানা আছে। এ কারণে শেরপুরে খামারের সংখ্যা ও দুধ উৎপাদনও বেশি।