কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ঢল, খালি নেই হোটেল-মোটেল
কয়েক দিন আগেও পর্যটকশূন্য ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। তেমন ভিড় দেখা যায়নি পর্যটকদের। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ইতিমধ্যে আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-গেস্টহাউসের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
হোটেলমালিকেরা বলছেন, গতকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন শহরের হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস-রিসোর্টের কোনো কক্ষ খালি নেই। রবি ও সোমবার ২ দিন ১০ শতাংশ কক্ষ খালি থাকলেও এরপর থার্টি ফার্স্ট নাইট (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত শতভাগ কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা। আগামী ১০ দিনে সৈকতে অন্তত ৭ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে মালিকেরা মনে করছেন।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ শতাংশ হোটেল-গেস্টহাউসের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলোও দু-এক দিনের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে। পর্যটকদের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর আছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কয়েক লাখ পর্যটকের নিরাপত্তা, সমুদ্রে নিরাপদে গোসলসহ চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে মাঠে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
সৈকতের কলাতলীতে ছয়তলার ওয়েল পার্ক গেস্টহাউসে মোট কক্ষ আছে ৪৪টি। ভাড়া দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, কোনো কক্ষ খালি নেই। গেস্টহাউসটির ব্যবস্থাপক মো. আরিফ বলেন, শনিবার পর্যন্ত তাঁদের গেস্টহাউসে কোনো কক্ষ খালি নেই।
পাশের সি পার্ক গেস্টহাউসে ৭০টি কক্ষ থাকলেও কোনোটি ফাঁকা নেই। আশপাশের অস্টার ইকো, ইউনি রিসোর্ট, ডায়মন্ড প্যালেস, সেন্ট মার্টিন রিসোর্ট, ইকরা বিচ রিসোর্ট, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল কল্লোল, অভিসার, তারকা হোটেল সি গাল, সায়মান বিচ রিসোর্ট, কক্স টু ডে, লং বিচ হোটেল, ওশান প্যারাডাইসসহ ছোট–বড় পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজের অধিকাংশ কক্ষ খালি নেই। এসব হোটেলে কক্ষ আছে ৮৪ হাজারের বেশি। ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২৮ হাজার। গাদাগাদি করে থাকলে সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার পর্যটক থাকা যায়।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর কক্ষভাড়ার বিপরীতে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। যদিও নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
সেলিম নেওয়াজ বলেন, শনিবার পর্যন্ত তিন দিনে কক্সবাজার সৈকতে আড়াই লাখের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটবে। ইতিমধ্যে শহরের সব হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের ৯৭ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বুকিং হয়ে যাবে।
শহরের কলাতলীর হাঙর ভাস্কর্য মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরিবহন থেকে পর্যটকেরা নামছেন। যাঁদের হোটেলকক্ষ বুকিং দেওয়া আছে, তাঁরা অটোরিকশা, ইজিবাইকে গন্তব্যে ছুটছেন। যাঁদের কক্ষ বুকিং করা নেই, তাঁদের সড়কের দুই পাশে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সৌদিয়া পরিবহনের সামনে এমন ৪০–৫০ জন পর্যটককে দেখা গেছে, যাঁদের কেউ এসেছেন কুমিল্লা থেকে, কেউ রাজধানী ঢাকা থেকে।
রাজধানীর সূত্রাপুরের কলেজশিক্ষক সাব্বির আহমদ এসেছেন স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রেখে সাব্বির গেছেন হোটেল খুঁজতে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে হতাশ হয়ে বললেন, ‘এমন অবস্থা হবে, কল্পনাও করিনি।’
রাজশাহীর ঠিকাদার সলিমুর রশীদ বলেন, তিন দিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সকালে নামেন তিনি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি হোটেলে কক্ষ পাননি। সলিমুর বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি কক্ষ খালি হলে তিনি সেখানে ওঠার অপেক্ষায় আছেন।
নাফ নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে গত নভেম্বরে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। তবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিনে তিনটি বিলাসবহুল জাহাজ চলাচল করছে। ভাড়া বেশি ও গভীর সমুদ্র দিয়ে যাতায়াত করায় অনেকে এ নৌপথে ভ্রমণ করতে চান না। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল করবে বলে জানিয়েছে ওই নৌপথে চলাচলকারী জাহাজমালিকদের সংগঠন সি-ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (স্কোয়াব)।
স্কোয়াবের সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে অন্তত ৭ লাখ পর্যটক জড়ো হবেন। তাঁদের ৭০ শতাংশ টেকনাফ দিয়ে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে আগ্রহী। তাতে খরচও কম পড়ে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল করবে।