ফরিদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক ও তাঁর স্ত্রীর ৪ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করল দুদক
ফরিদপুরে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রী জামিলা পারভীনের নামে থাকা প্রায় চার কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব ও স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর আলী খানের নির্দেশে গতকাল রোববার এ সম্পত্তি জব্দ করে দুদক ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
দুদক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর নামে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ে জমা দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর ফরিদপুর দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান আকন্দ অনুসন্ধান করে স্থাবর–অস্থাবরসহ প্রায় চার কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পান। এ সম্পত্তি জব্দের জন্য ফরিদপুর দুদক গত ৭ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর আদালত সম্পত্তি জব্দ করার জন্য আদেশ দেন। এরপর গতকাল রোববার সম্পত্তি জব্দ করে দুদক, স্থগিত করে দেওয়া হয় ব্যাংক হিসাবগুলো।
জব্দ করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার ৮৪১ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি সবই স্ত্রী জামিলা পারভীনের নামে। এর মধ্যে খুলনা, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর—এই তিন জেলায় জামিলার বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি আছে। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৮১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকে তাঁদের টাকা ও স্থায়ী আমানত আছে ১ কোটি ৬ লাখ ১৭ হাজার ২৯১ টাকার।
দুদক জানায়, তুহিন লস্করের স্ত্রী জামিলা পারভীনের আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও ভুয়া ব্যবসা দেখিয়ে এই সম্পদ তিনি অর্জন করেছেন। তাঁর নামে থাকা সম্পত্তির মধ্যে আছে খুলনার হাউজিং এস্টেট এলাকার গোয়ালপাড়া মৌজায় ১ দশমিক ৮০৫ কাঠা জমির ওপর আনুমানিক ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের দুই ইউনিটের পাঁচতলা বাড়ি, খুলনার খালিসপুরের গোয়ালপাড়া মৌজায় ১ দশমিক ৮০৫ কাঠা জমি, যার আনুমানিক মূল্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফরিদপুর শহরের ১১৬ নম্বর কমলাপুর মৌজায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের শহরের ১১৯ নম্বর হাবেলি গোপালপুর মৌজায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা মূল্যের শহরের হাবেলি গোপালপুর মৌজায় শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ জমি, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের গোপালগঞ্জ সদরের খাটারা মৌজায় ৫ দশমিক ২০ শতাংশ জমি, ৯ লাখ ১৮ হাজার ২২৫ টাকা মূল্যের একই মৌজায় ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ৬ লাখ ১২ হাজার ২২৫ টাকায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ জমি।
ফরিদপুর দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিআই তুহিন লস্কর ও তাঁর স্ত্রীর নামে আরও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এ জন্য এ দম্পতির বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত আছে। পরিপূর্ণ হিসাব পাওয়ার পর এ ব্যাপারে নিয়মিত মামলা করা হবে। তিনি যাতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে না পারেন কিংবা স্থাবর সম্পত্তি অন্যের নামে হস্তান্তর করতে না পারেন, সে জন্য এ সম্পত্তি জব্দ করে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে টিআই তুহিন লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেনামি একটি দরখাস্ত পেয়ে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল দুদক। এ রকম একটি তথ্য আমার জানা ছিল। এর ধারাবাহিকতায় দুদক কী করেছে, তা আমার জানা নেই। তবে আমার জানামতে, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।’ নিজের সব সম্পত্তি বৈধ দাবি করে তিনি বলেন, এটা হয়রানি ছাড়া আর কিছু নয়, তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।