বরিশাল তিন চাকার যানের স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা নিতে হামলা, আহত ১২
বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন তিন চাকার স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে চাঁদা আদায় করতে শ্রমিক দলের এক নেতার লোকজন হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে তিন চাকার যানের কয়েকজন চালকসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল রাতের ওই সংঘর্ষে গুরুতর আহত সাতজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন রূপাতলী এলাকার সাগর (৩০), আরিফ (৩০), কালাম হোসেন (৪২), রাজু (৩৫), কবির হোসেন (৪২) ও আবুল হোসেন (৪০)।
তিন চাকার যানের চালকেরা জানান, আওয়ামী লীগের আমলে একটি চক্র তিন চাকার যানের চালকদের কাছ থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করতেন। এ ছাড়া প্রতিটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ৮০ থেকে ১২০ টাকা চাঁদা নেওয়া হতো। এর নিয়ন্ত্রক ছিলেন রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তাঁরা গা ঢাকা দিলে রূপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব নেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। বিএনপির নেতারা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের দখল নিলেও তিন চাকার যানের চালকেরা ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব মোল্লার নির্দেশে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দেন।
তিন চাকার যানের চালকদের অভিযোগ, রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক দলের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সহসভাপতি কালাম চৌধুরীসহ তাঁদের লোকজন টার্মিনালের প্রতিটি বাস থেকে প্রতিবার টার্মিনাল থেকে ছাড়তে ১০০-১২০ টাকা করে চাঁদা তোলা শুরু করেন। শুধু বাসই নয়, তারা তিন চাকার যান থেকেও চাঁদা আদায়ের চেষ্টা চালান। কিন্তু তিন চাকার যানের চালকেরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন কালাম চৌধুরীর লোকজন। পরে তিন চাকার যানের চালকেরা পুনরায় বিএনপি নেতা রাজীব মোল্লার কাছে যান এবং বিষয়টি তাঁকে জানান। এ ঘটনায় কালাম চৌধুরীর লোকজন ক্ষুব্ধ হন এবং শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিন চাকার যানের স্ট্যান্ডে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা চালকদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত এবং বেশ কয়েকটি ইজিবাইক ভাঙচুর করেন।
তিন চাকার যান চালকেরা জানান, কালাম চৌধুরী নিজেকে শ্রমিক দলের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি দাবি করেন এবং তিনি বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দীন সিকদারের লোক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে জেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়েজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘২৫ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমিক দলের কোনো কমিটিই নেই।’
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা রাজীব মোল্লা শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন তিন চাকার যানের স্ট্যান্ডটি আমার মার্কেটের সামনের জমিতে। তাই তিন চাকার যানের চালকেরা আমার কাছে এসে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমি শ্রমিকদের কোনো রকম কাউকে চাঁদা না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিই। কিন্তু কালাম চৌধুরী ও তাঁর লোকজন চাঁদা তোলার ব্যাপারে অনড় ছিল। আমিও এতে অনড় থাকায় শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে তিন চাকার স্ট্যান্ডে চালকদের ওপর হামলা চালায় কালাম চৌধুরীর লোকজন। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। আহত চালকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিই।’
ওখানে বাস শ্রমিক ও তিন চাকার যানের শ্রমিকদের মধ্যে গত রাতে একটি ঝামেলা হয়েছে। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এসেছিলেন। আমাকেও খবর দেওয়া হয়েছিল। আমার কার্যালয়ে দুই পক্ষ বসেছিল। কিন্তু কে কার ওপর হামলা করেছে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেনি।
চাঁদা না পেয়ে তিন চাকার যানের চালকদের ওপর হামলা ও ইজিবাইক ভাঙচুর করার অভিযোগের বিষয়ে কালাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি একজন পেশাদার শ্রমিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের বৈধ সাধারণ সম্পাদক। রাজীব মোল্লা আমার বাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় দখল করার জন্য তিন চাকার যানের শ্রমিকদের নিয়ে শুক্রবার রাতে হামলা চালালে বাস শ্রমিকেরা তা প্রতিরোধ করেন। এখানে চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’
তবে এ বিষয়ে নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দীন সিকদার বলেন, ‘ওখানে বাস শ্রমিক ও তিন চাকার যানের শ্রমিকদের মধ্যে গত রাতে একটি ঝামেলা হয়েছে। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এসেছিলেন। আমাকেও খবর দেওয়া হয়েছিল। আমার কার্যালয়ে দুই পক্ষ বসেছিল। কিন্তু কে কার ওপর হামলা করেছে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে বসার কথা আছে।’
এ বিষয়ে আজ শনিবার রাত ৯টার দিকে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোক বলেন, আহত ব্যক্তিরা অভিযোগ দায়েরের জন্য থানায় এসেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।